শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জোর করে ছাত্রীদের চুল কেটে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষিকা ও দপ্তরির বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশে আজ সোমবার অভিযোগের তদন্তে বিদ্যালয়ে পরিদর্শন করেছেন উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মশিউল আজম হিরক। দায়ীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।

সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের অবস্থিত ২৯ নম্বর ডিএমখালী বোর্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। গত বৃহস্পতিবার ওই বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির সাথী, মারিয়া, তাজরিন, ফাহমিদা, সুমাইয়া, শ্রাবন্তি, ইতি, ফারহানা, নাহিদা ও ফাতেমাসহ ১১ ছাত্রীর চুল এব্রু থেব্রু করে কেটে দেয় বিদ্যালয়ের দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরী জুমান। প্রধান শিক্ষক কাবেরী গোপ দাঁড়িয়ে থেকে জুমানকে চুল কাটতে হুকুম করেন। জোর করে ছাত্রীদের চুল কেটে দেয় জুমান। এতে ছাত্রীরা কান্নাকাটি শুরু করে। আশপাশ থেকে অভিভাবকরা এগিয়ে এলে প্রধান শিক্ষক কাউকে বিদ্যালয়ে ঢুকতে দেননি। দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরী মেয়েদের চুল কেটে দিয়েছে— এ খবর জানাজানি হওয়ার লজ্জায় ভেঙে পড়েছে ছাত্রীরা। কেউ কেউ বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা এ ঘটনায় প্রধান শিক্ষকের শাস্তির দাবি জানিয়েছে।

ভুক্তভোগী ছাত্রী নাহিদা বলে, ‘আমার চুল অনেক বড় ছিল। আমি কাটতে বারবার নিষেধ করেছি। কিন্তু ম্যাডাম দপ্তরিকে কাটতে বলেছে। সে জোর করে আমার চুল কেটে দিয়েছে। আমি অনেক কান্নাকাটি করেছি। যেভাবে চুল কেটে দিয়েছে, এখন পুরো চুল ফেলে দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। আমি লজ্জায় স্কুলে যাইনি। আমি এর বিচার চাই।’

ভুক্তভোগী ছাত্রী সাথী বলে, ‘আমরা কান্না করেছি। ম্যাডাম বলে মাথায় চুল থাকলে ব্রেন খারাপ হয়ে যায়। উকুনে রক্ত খেয়ে ফেলে। তাই চুল কেটে দিয়েছে। এলোমেলোভাবে চুল কেটেছে দপ্তরি। তাই আমার সব চুল ফেলে টাক হয়ে গেছি।’

নাহিদার বাবা দেলোয়ার বেপারী বলেন, ‘আমার মেয়ে বড় হয়ে গেছে। কিছুদিন পর হাইস্কুলে যাবে। একজন পুরুষ ছেলে দিয়ে আমার মেয়ের চুল কাটার সাহস প্রধান শিক্ষক পেলেন কোথায়? চুল হলো মেয়েদের অলংকার। এখন মেয়ে স্কুলে যায় না। ঘর থেকে লজ্জায় বের হয় না। আমি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচার চাই।’

ওই বিদ্যালয়ের দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরী জুমান বলেন, ‘আমাকে প্রধান শিক্ষিকা চুল কাটতে বলেছে। আমি বিদ্যালয়ে থাকা কাঁচি দিয়ে চুল কেটেছি। আমার কোনো দোষ নাই।’

ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা কাবেরী গোপ বলেন, ‘আমি মাসখানেক আগে মা সমাবেশে মেয়েদের চুল সেটিংস করে আসতে বলেছিলাম। কিন্তু ওরা আমার কথা বুঝেনি। তাই আমরা উপস্থিত থেকে দপ্তরিকে দিয়ে শিক্ষার পরিবেশ সুন্দর করতে মেয়েদের চুল কেটেছি। এ নিয়ে কিছু লোক প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে।’

ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মাহাবুর রহমান শেখ বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিয়ে জানাতে বলেছি।’

শরীয়তপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমি সাংবাদিকদের মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি। বিষয়টি দুঃখজনক। প্রধান শিক্ষক জোর করে ছাত্রীদের চুল কাটতে পারেন না। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছে। প্রতিবেদন হাতে পেলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’