শরীয়তপুরে অপহৃত শিশু উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৩
শরীয়তপুরে অপহরণের একদিন পর আব্দুন নুর শিশির (৮) নামে এক অপহৃত শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে গোসাইরহাট উপজেলার কোদালপুর এলাকা থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ইউসুফ ঢালী (২২), রাসেদ (২১) ও সৌরভ (২০) নামের তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
উদ্ধার হওয়া আব্দুন নুর শিশির শরীয়তপুর পৌরসভার তুলাসার গ্রামের মাস্টার সাত্তার খালাসী ও সালমা আক্তার বকুল দম্পতির সন্তান। সে শরীয়তপুর কালেক্টরেট কিশলয় কে.জি. স্কুলের নার্সারি শ্রেণির ছাত্র ছিল।
পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, গত বছর নড়িয়ার ভয়াবহ পদ্মার ভাঙনে সবকিছু হারিয়ে শরীয়তপুর পৌরসভার তুলাসার গ্রামে বাড়ি করে বসবাস করে আসছেন মাস্টার সাত্তার খালাসী। গত সোমবার স্কুল থেকে এসে বাড়ির পাশের মাঠে খেলতে যায় তাঁর ছেলে শিশির। খেলা শেষে সে আর বাড়ি ফিরে আসেনি। সব জায়গায় খুঁজেও শিশিরের কোনো সন্ধান পায়নি তার পরিবার। পরে ওইদিন সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে শিশিরের বাবার মোবাইল ফোনে অপরিচিত নম্বরে কল করে ছেলের জীবনের বিনিময়ে এক কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়।
বিষয়টি উল্লেখ করে ওই দিন রাতে অপহৃত শিশিরের বাবা পালং মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। মঙ্গলবার পালং থানা পুলিশ গোসাইরহাট থানা পুলিশের সহযোগিতায় কোদালপুর এলাকার হাজী দেওয়ানবাড়ী গ্রামের স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আল আমিনের বাড়ির পাশ থেকে অসুস্থ অবস্থায় শিশু শিশিরকে উদ্ধার করে।
পুলিশ আরো জানায়, ওই দিন রাত ১১টার সময় অপহরণকারী দলের এক ব্যক্তি শিশুটিকে নিয়ে আল আমিনের বাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় আল আমিনের ভাই আলাউল মাছ শিকার শেষে বাড়ি ফিরছিলেন। গভীর রাতে একটি অসুস্থ শিশুকে নিয়ে ওই যুবককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তাঁর সন্দেহ হলে তিনি কারণ জানতে চান। তখন অপহরণকারী দলের সদস্য তাঁর ভাইয়ের ছেলে পরিচয় দিয়ে গাড়ি আনার কথ বলে সটকে পড়েন।
অপহৃত শিশিরের বাবা মাস্টার সাত্তার খালাসী বলেন, “সোমবার দুপুরে বাড়ির পাশের মাঠে খেলতে গিয়ে শিশির নিখোঁজ হয়। ওইদিন সন্ধ্যায় অপরিচিত নম্বর থেকে আমার মোবাইলে কল আসে। ওপাশ থেকে আমাকে বলে, ‘তোর ছেলেকে খুঁজে লাভ নাই? তোর ছেলে আমাদের কাছে আছে। ছেলেকে পেতে হলে এক কোটি টাকা লাগবে।’ ওরা আমার ছেলের সঙ্গে কথা বলতে দেয়নি। আমি পুলিশকে বিষয়টি বলি। পালং মডেল থানা পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে আমার ছেলেকে উদ্ধার করেছে। তা না হলে অপহরণকারীরা আমার ছেলেকে মেরে ফেলত। আমি অপহরণকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”
পালং মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসলাম উদ্দিন বলেন, মুক্তিপণের জন্য শিশির নামে আট বছরে একটি শিশুকে অপহরণ করে। সঠিক সময়ে তাকে উদ্ধার করা সম্ভব না হলে অপহরণকারীরা তাকে মেরে ফেলত। শিশুটিকে অপহরণকারীরা নেশাজাতীয় দ্রব্য খাওয়ানোসহ মারধর করেছে। এতে শিশুটি মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ ঘটনায় শিশুটির বাবা বাদী হয়ে মামলা করেছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।