নতুন ভিডিও : রক্তাক্ত রিফাতকে নিয়ে একাই হাসপাতালে মিন্নি!
একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা দ্রুতবেগে এসে পৌঁছায় বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে। রক্তাক্ত রিফাতকে সঙ্গে নিয়ে রিকশায় ছিলেন তাঁর স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি। হাসপাতালের সামনে পৌঁছাতেই আশপাশের মানুষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এমন অবস্থায় এক যুবক তাড়াহুড়ো করে হাসপাতালের ভেতর থেকে নিয়ে আসেন একটি স্ট্রেচার। রিফাতকে স্ট্রেচারে করে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে।
আলোচিত রিফাত হত্যা মামলা নিয়ে যখন সারা দেশে তোলপাড় চলছে, এর মধ্যেই গতকাল সোমবার এমন একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
ভিডিওতে দেখা যায়, ২৬ জুন সকাল ১০টা ২১ মিনিটে মিন্নি রিফাতকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর একটি অ্যাম্বুলেন্স এসে পৌঁছায় হাসপাতালের সামনে। রিফাতকে অ্যাম্বুলেন্সে নিতেই আশপাশে অসংখ্য মানুষের জটলা দেখা যায়। এরপর অ্যাম্বুলেন্সটি রওনা দেয় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উদ্দেশে।
এদিকে ২৬ জুন জানা গেছে, বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই মৃত্যু হয় রিফাত শরীফের।
এর মধ্যেই ঘটে গেছে অনেক ঘটনা। প্রথমে রিফাতের স্ত্রী মিন্নিকে এ হত্যাকাণ্ডের প্রধান সাক্ষী করা হলেও কিছুদিন পর তাঁকে করা হয় আসামি। এর আগে রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেছিলেন, রিফাতকে বাঁচাতে কোনো চেষ্টা করেননি মিন্নি। এ ছাড়া রিফাত হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি নয়ন বন্ডের সঙ্গে মিন্নির সম্পর্কের বিষয় টেনে এনে মিন্নিকে রিফাত হত্যায় জড়িত বলে দাবি করেন। মিন্নির গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচিতেও যোগ দেন আবদুল হালিমসহ অনেকেই।
এরপর মিন্নিও পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে রিফাত হত্যায় তাঁর সম্পৃক্ততার বিষয়টি অস্বীকার করেন। পরে মিন্নিকে গ্রেপ্তার করে আলাদতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
এদিকে অনেক তর্কবিতর্কের পর গত ২৯ আগস্ট মিন্নির জামিন দেন হাইকোর্ট। তবে জামিনে মুক্ত হওয়ার পর মিন্নিকে গণমাধ্যমে কথা বলায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
এদিকে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর দাবি করেন, ষড়যন্ত্র করে তাঁর মেয়েকে দোষী করা হচ্ছে। রিফাতকে বাঁচানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা মিন্নি করেছিলেন বলেও দাবি কিশোরের।
গত ২৬ জুন বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে নিয়ে বরগুনা সরকারি কলেজ থেকে ফেরার পথে নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজীসহ একদল যুবক রিফাত শরীফের ওপর হামলা চালায়। তাঁরা ধারালো দা দিয়ে রিফাত শরীফকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। এ সময় মিন্নি হামলাকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন; কিন্তু তাদের থামানো যায়নি। খুনিরা রিফাত শরীফকে উপর্যুপরি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে চলে যায়। পরে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিফাতের মৃত্যু হয়।
এ হত্যার ঘটনায় রিফাতের বাবা আবদুল হালিম পরের দিন সকালে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা সদর থানায় মামলা করেন। মিন্নি ছিলেন সেই মামলার এক নম্বর সাক্ষী। পরে ১৬ জুলাই রাতে এ মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। পরদিন বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী মিন্নির পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর মধ্যে গত ২ জুলাই রিফাত হত্যা মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।