৩৬ বছর লড়ে প্রেম হলো পরিণয়
এক-দুই বছর নয়, ৩৬ বছর প্রেম করার পর অবশেষে বিয়ে করেছেন তাঁরা। এই দীর্ঘ পথপরিক্রমায় তাঁদের পাড়ি দিতে হয়েছে বহু বাধাবিপত্তি। কিন্তু হার মানেননি দুজনের কেউই। বন্ধ করেননি অপেক্ষার প্রহর গোনাও।
বাগেরহাটের শুধাংশু বৈরাগী আর নিভা রানী রায় মন দেওয়া-নেওয়ার তিন যুগ পার করে ২৭ ফেব্রুয়ারি সাত পাকে বাঁধা পড়েছেন। সাড়াজাগানো এই প্রেমের পরিণতি দেখতে অসংখ্য মানুষ ভিড় জমান কনের বাড়ি চিতলমারী উপজেলার খড়মখালী গ্রামে।
শুধাংশু বৈরাগী জানান, স্কুলজীবনেই তাঁর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে খড়মখালী গ্রামের নিভা রানী রায়ের সঙ্গে। কলেজে পড়তে এসে গভীর হয় তাঁদের প্রেমের সম্পর্ক। শিক্ষাজীবন শেষ করে দুজনে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখলেও নানা সমস্যায় সেটি আটকে যায়। বিষয়টি দুই পরিবারের মধ্যে জানাজানি হলেও নানা মতবিরোধ থাকার ফলে তাঁদের ঘর বাঁধার স্বপ্ন আর বাস্তবে রূপ নেয়নি। আশায় বুক বেঁধে থাকেন দুজনে। এভাবে কেটে যায় প্রেমের প্রায় ৩৬টি বছর।
শুধাংশু বৈরাগী বর্তমানে ৫৫ বছরে পা দিয়েছেন। এলাকায় স্বঘোষিত চিরকুমার সংগঠনের সভাপতি হিসেবে তাঁর পরিচয় রয়েছে। কয়েকবার তিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীও হয়েছেন। এলাকায় সামাজিক-সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও তাঁর রয়েছে ব্যাপক পরিচিতি।
অন্যদিকে নিভা রানীর বয়স এখন ৫০-এর কোঠায়। তিনি বর্তমানে একটি বেসরকারি সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের বিয়ের পর থেকে বয়সের কথা না ভেবে এই প্রেমিক জুটির দীর্ঘদিনের অপেক্ষার বিষয়টি এলাকার সচেতন মহলের নজরে আসে। বিষয়টি নিয়ে অনেকেই এগিয়ে আসেন। কয়েক মাস ধরে চেষ্টা চলে দুই পরিবারকে বিয়েতে রাজি করানোর। অবশেষে সাড়া মেলে।
দুই পরিবারের সম্মতিতে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার রাত ১১টায় হিন্দু রীতি অনুযায়ী আগুন সাক্ষী রেখে মালা বদল করেন শুধাংশু ও নিভা। নানা বাধাবিপত্তিকে পাশ কাটিয়ে জয় হয় প্রেমের। আর তাই সবাই বলছেন শুধাংশু-নিভা হলো এ যুগের রজকিনী-চণ্ডিদাস।
বিয়ে দেখতে দলে দলে উৎসুক মানুষ ছুটে আসেন মণ্ডপে। বিয়েবাড়িতে আর তিল পরিমাণ ঠাঁই ছিল না। কনের বাড়িতে রাত জেগে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা উপভোগ করেন আগতরা। পাশাপাশি এ বিয়েকে ঘিরে মিষ্টিমুখ ও রং মাখামাখি চলে রাতভর।
কনের বাড়ির পাশের চা বিক্রেতা মো. আবু হানিফ জানান, গত কয়েক দিন ধরে এলাকার চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সর্বত্র চলছে এ বিয়ে নিয়ে আলোচনা। শ্রেষ্ঠ প্রেমিক জুটি হিসেবে এলাকায় সুখ্যাতিও পেয়েছেন তাঁরা।
বিয়ের পর নিজের প্রতিক্রিয়ায় শুধাংশু বৈরাগী জানান, তাঁদের প্রেম সার্থক হয়েছে। জয় হয়েছে ভালোবাসার। নিভা রানীকে নিয়ে এখন বাকি জীবনটা সুখে-শান্তিতে কাটাতে চান তিনি। সত্যিকারের প্রেম কখনো বিফলে যায় না বলেও অভিমত দেন তাঁরা। সেই সঙ্গে প্রেমিক-প্রেমিকারা যেন ভুল করে কখনো আত্মহত্যার পথ বেছে না নেয়, এ ব্যাপারেও পরামর্শ দেন তিনি।