নরসিংদীতে ড্রাগন ফল চাষে সাফল্য
থাইল্যান্ডের ড্রাগন ফল এখন বিশ্বখ্যাত। অতিথি আপ্যায়নে পুষ্টিগুণে ভরা ওষুধি ড্রাগন ফলের খ্যাতি আছে। সেই ড্রাগন ফল মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে সুখ্যাতি অর্জনের পর বাংলাদেশেও বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের মাটিতেই চাষাবাদ হচ্ছে সুস্বাদু ড্রাগন ফল। নরসিংদীর শিবপুরে ড্রাগন ফল চাষে পাওয়া গেছে সফলতা।
বিদেশি জাতের ড্রাগন ফলের চাষাবাদে সাফল্য দেখিয়েছে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের আওতাধীন নরসিংদীর শিবপুর আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণাকেন্দ্র। নরসিংদীর মাটি ও আবহাওয়া এ ফল চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী বলে মনে করছেন এখানকার গবেষকরা।
গবেষণাকেন্দ্রের সূত্র মতে, ড্রাগন ফল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উষ্ণমণ্ডলীয় এলাকার ফল। এটি ক্যাকটাস জাতীয় ফলের অন্তর্ভুক্ত। ড্রাগন ফলের গাছ লতানো ইউফোরবিয়া গোত্রের ক্যাকটাসের মতো।
লতাবিশিষ্ট গাছটিতে ক্যাকটাসের মতো পাতাতেই প্রথমে সুদৃশ্য ফুল ও পরে ফলের জন্ম হয়। গাছটি দেখলে একে সবুজ ক্যাকটাস বলেই মনে হয়। এর উৎপত্তিস্থল মধ্য আমেরিকা। চীনের লোকেরা একে ফায়ার ড্রাগন ফ্রুট এবং ড্রাগন পার্ল ফ্রুট বলে। এ ছাড়া ফলটি ভিয়েতনামে সুইট ড্রাগন, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়াতে ড্রাগন ফ্রুট ও থাইল্যান্ডে ড্রাগন ক্রিস্টাল নামে পরিচিত। ভিয়েতনামে ড্রাগন ফল বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপকহারে চাষাবাদ করা হয়।
ড্রাগন ফল লাল ও হলুদ রঙের হয়ে থাকে। প্রচলিত ফলের চেয়ে ড্রাগন ফলের স্বাদও ভিন্ন। এই ফলের স্বাদ টক-মিষ্টি। ডিম্বাকৃতি ও গোলাকার ড্রাগন ফলের শাঁস খেতে হয়। এর শাঁস খুবই সুস্বাদু। এ ছাড়া এটা সালাদ, কেক ও আইসক্রিমে ব্যবহৃত হয়। ফলটি উচ্চ পুষ্টিমান সম্পন্ন বিশেষ করে ভিটামিন-সি, আঁশ ও এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। যা হজমশক্তি, স্মৃতিশক্তি ও চোখের জ্যোতি বাড়ায়। রক্তের গ্লুকোজ ও হাইপারটেনশন, রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল কমায়।
২০১৩ সালে কুমিল্লা আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণাকেন্দ্র থেকে আটটি ড্রাগন ফলের কাটিং সংগ্রহ করে নরসিংদীর শিবপুর আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণাকেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়। দীর্ঘ দুই বছর পরিচর্যার পর সফলতা পান গবেষকরা।
সরেজমিনে গবেষণাকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কেন্দ্রের ফটকের ডান পাশেই ড্রাগন ফলের প্লট। ড্রাগন গাছের অবলম্বন হিসেবে একটি কংক্রিটের ছয় ফুট পিলার পুঁতে দেওয়া হয়েছে। পিলারের মাথায় বসিয়ে দেওয়া হয়েছে মোটরসাইকেলের পুরনো টায়ার। চেইন ক্যাকটাসের মতো দেখতে ড্রাগন গাছগুলো পিলার বেয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। মাথায় মাথায় ফুল ও ফল ধরেছে।
কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আরিফুল হক বলেন, ‘ড্রাগন গাছের বয়স তিন থেকে চার বছর হলে গাছে ফল আসা শুরু হয়। এ গাছের ফুল ফোটে রাতে। দেখতে অনেকটা নাইট কুইন ফুলের মতো, লম্বাটে, সাদা ও হলুদ। ড্রাগন ফুলকে রাতের রানি নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে। ফুল স্বপরাগায়িত। তবে মাছি, মৌমাছি ও পোকা-মাকড়ের পরাগায়ণ ত্বরান্বিত করে এবং কৃত্রিম পরাগায়ণও করা যেতে পারে। সাধারণত মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে ফল সংগ্রহ করা হয় এবং অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত নিয়মিত বিরতিতে ফল সংগ্রহ করা যায়। প্রতি পিলারের পাশে দুই থেকে তিনটি চারা বা কাটিং লাগানো হলে প্রতি কাটিং থেকে ১২ থেকে ১৪টি ফল পাওয়া যায়। আকারভেদে ফলের ওজন ৩০০ থেকে ৩৫০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে।
আমাদের দেশে এ ফল নতুন হওয়ায় বাজারে এখনো সেভাবে প্রচলিত হয়নি। বড় বড় শপিং মল ও চেইন শপে এগুলো পাওয়া যায়। যার প্রতিকেজির মূল্য এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা।
নরসিংদীর মাটি ও আবহাওয়া ড্রাগন ফল চাষে উপযোগী জানিয়ে শিবপুর আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণাকেন্দ্রর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. নাজিরুল ইসলাম বলেন, ‘ড্রাগন ফল আমাদের দেশে সম্পূর্ণ নতুন একটা ফল। এই ফল দেশে আমদানি হওয়ার পর আমরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলভিক্তিক আমাদের গবেষণাকেন্দ্রগুলোতে পরীক্ষা করে দেখেছি— এটা কোন কোন জায়গায় উপযোগী। এরই অংশ হিসেবে আমরা ড্রাগন ফল শিবপুরে পরীক্ষামূলক চাষ করে সফলতা পেয়েছি। যা এই অঞ্চলের কৃষকদের জন্য বিরাট সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে। আমরা শিগগিরই ড্রাগন ফল চাষের কলাকৌশল কৃষককে জানিয়ে চারা বিতরণ করব।’
নাজিরুল ইসলাম আরো বলেন, ‘আশা করছি, অচিরেই ড্রাগন ফলটি এ জেলার অর্থকরী ফল হিসেবে বিবেচিত হবে।’