সারসে শান্তি মেলে যে গ্রামে
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চরাঞ্চলের মোল্লান গ্রামে গড়ে উঠেছে সারস বক পাখির অভয়ারণ্য। এলাকার শিমুল, কড়াই, কদম, পিঠালিসহ বেশ কিছু বড় বড় গাছে বাসা বেঁধে অবস্থান করছে শত শত পাখি। ভোর কিংবা রাত পাখির কলতানে মুখরিত থাকে গোটা মোল্লান গ্রাম। প্রতিদিন নীল আকাশের নিচে প্রচুর পাখির অবাধ বিচরণ মুগ্ধ করছে সাধারণ মানুষকে।
স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমরা নিজেরাই এদের রক্ষা করার চেষ্টা করি। এরা থাকলে মনে হয় যেন আমাদের বাড়ি পাহারা দিচ্ছে কেউ।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের মহানন্দা নদীর শেখ হাসিনা সেতু পেড়িয়ে মাত্র আট কিলোমিটার দূরের গ্রামীণ জনপদ মোল্লান। চরাঞ্চলের সুন্দরপুর ইউনিয়নের এই মোল্লান গ্রামে বাসা বেঁধেছে শত শত সারস বক পাখি। শামুখ খোল প্রজাতির এই বকের উড়াউড়ি ও কল-কাকলিতে মুখরিত থাকে দিন-রাত সব সময়। তবে তাতে বিন্দুমাত্র বিরক্তি নেই এলাকাবাসীর। দূর থেকে আষাঢ় মাসের দিকে আসা বক পাখিগুলো সাত থেকে আট মাস থাকার পর আবারও চলে যায় দূরে কোথাও।
চরাঞ্চলের পদ্মা, পাগলা আর মহানন্দা নদীর সংযোগস্থলের গ্রাম মোল্লানে ১৯৯৮ সালের দিক থেকে আসা শুরু হয় বক পাখির। প্রথমে অল্প পরিমাণ পাখি আসলেও দিনে দিনে তার সংখ্যা বাড়তে থাকে।
অতিথি এই পাখিগুলোকে স্থানীয় বাসিন্দারাও বরণ করে নিয়েছেন আপন হিসেবে। আর প্রতিদিন পাখি দেখতে ভিড় করছে দূরদুরান্তের সাধারণ মানুষ। স্থানীয়রা নিজ উদ্যোগেই বন্ধ করে দিয়েছেন পাখি শিকার।
স্থানীয় এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, এখানে আসা পাখির সংখ্যা কয়েকশত। এরা আকাশে উড়ছে। গাছের ডালে বসছে। দূর দূরান্ত থেকে মানুষ এ এলাকায় আসে পাখি দেখতে।
স্থানীয় আরো এক বাসিন্দা জানান, ১৯৯৮ সাল থেকে এসব পাখি এ অঞ্চলে আসতে থাকে। গাছে ডিম পাড়ে। সে ডিম থেকে বাচ্চাও আসে। অনেক লোক আসে পাখি শিকার করতে। কিন্তু আমরা দেই না। তিনি জানান, রাতে পাখির কিচির মিচির এমন মনে হয় আমার বাড়ির চারপাশে পাহারাদার আছে।
মোল্লানসহ আশের পাশের গ্রামের পাখির অবাধ বিচরণ নিশ্চিত করতে উপযোগী বৃক্ষ রোপনসহ জনসচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করছে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ।
সুন্দরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান বলেন, ‘আমরা জনগণের মাঝে প্রচার করেছি, তারা অতিথি পাখি। তাদের যেন কোনো কষ্ট না হয়। এদের আপনারা দেখে রাখবেন। এসব পাখির সেবাযত্নের বিষয়টিও আমরা পরিষদ থেকে করার চেষ্টা করি।’