পাটগ্রামের ১৩০ জন ভারতে যাচ্ছেন আজ
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার চারটি ছিটমহল থেকে ভারতের নাগরিকত্ব নেওয়া ১৩০ জন আজ সোমবার বাংলাদেশ ছেড়ে যাচ্ছেন। সকালে তাঁদের ভারতের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে।
দুপুরের দিকে বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের মূল ভূখণ্ডে পা রাখবে বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ ও শিশু। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, অস্থাবর সম্পত্তিসহ তাঁদের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জে নির্মিত অস্থায়ী ক্যাম্পে পৌঁছে দেওয়া হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। আর বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত তাঁদের নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও পুলিশ।
১৩০ জনের মধ্যে রয়েছে পাটগ্রামের সদ্যবিলুপ্ত ১১২, ১১৫ ও ১১৯ বাশঁকাটা এবং ১১৫ খড়খড়িয়া ছিটমহলের বাসিন্দারা, যাঁরা ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন।
নিজেদের জন্মভিটা ছেড়ে যাওয়ার আগে গতকাল তাঁরা বাংলাদেশে থেকে যাওয়া আত্মীয়স্বজন, বন্ধু ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে শেষবারের মতো দেখা করেন।
ভিটেমাটি আগেই বিক্রি করে দেওয়ায় আগের রাতটি কাটিয়েছেন প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে। কেউ বা কাটিয়েছেন খোলা আকাশের নিচে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার প্রথম দফায় একই উপজেলার ১১৪ লতামারীর একটি পরিবারের তিনজন এবং হাতীবান্ধার ১৩৫ ও ১৩৬ নম্বর গোতামারী ছিটমহলের ১৭টি পরিবারের মোট ৬২ জন বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে গেছেন।
জেলার তিনটি উপজেলায় বিলুপ্ত ৫৯টি ছিটমহলের মধ্যে জনবসতিহীন ১৭টি বাদে অবশিষ্ট ৪২টি ছিটমহলের মোট জনসংখ্যা ১০ হাজার ৩৭৬ জন। তাঁদের মধ্যে সাতটি ছিটমহলের ১৯৭ জন মানুষ ভারতীয় নাগরিকত্ব পেতে যৌথ জরিপে নিজেদের নাম নিবন্ধন করেছিলেন। আর বাদবাকি সবাই বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নিয়েছেন।
তবে ট্রাভেল পাশ জটিলতায় এখন পর্যন্ত যে কজন ভারতে যেতে পারেননি, তাঁদের বিষয়ে উভয় দেশ আলোচনা করে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানা গেছে।
গত জুলাইয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের কর্তৃপক্ষ ছিটমহলগুলোতে যৌথ জরিপ পরিচালনা করে। এতে দেখা যায়, অনেকে ভারতের নাগরিকত্ব নিয়ে দেশটিতে যেতে আগ্রহী। অন্যদিকে, অনেকেই বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নেয়।
গত ২৫ মে ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত স্থলসীমান্ত চুক্তি সমর্থনের প্রস্তাবে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি নামে খ্যাত চুক্তিটি ১৯৭৪ সালে সই হয়। ওই সময় ছিটমহল ও অমীমাংসিত ভূমি বিনিময়ে জাতীয় সংসদে চুক্তিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু তখনকার ভারতীয় সংসদ চুক্তিটির চূড়ান্ত অনুমোদন না দেওয়ায় তখন বাস্তবায়িত হয়নি। সেই থেকে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি ভূমি বিরোধ থেকেই যায়।
সর্বশেষ ২০১১ সালে ইন্দিরা চুক্তির আওতায় শেখ হাসিনা ও মনমোহন সিং একটি প্রটোকল সই করেন। এর পর সম্প্রতি ভারতীয় পার্লামেন্ট চুক্তিটি বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদন দেয়। ফলে চুক্তিটি বাস্তবায়নের পথ খুলে যায়।