চার ছাত্রকে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠালেন শিক্ষক
মোটরসাইকেলের নির্দেশক বাতি (ইন্ডিকেটর লাইট) ভাঙার অভিযোগে ষষ্ঠ শ্রেণির কক্ষ থেকে চার শিক্ষার্থীকে ডেকে নিয়ে পেটালেন সরকারি প্রাথমিক স্কুলের এক প্রধান শিক্ষক। আজ মঙ্গলবার দুপুরে বরগুনা সদর উপজেলার হাজারবিঘা ছোটলবণগোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
মারধরের শিকার রাকিব (১২), ঈসা আহমেদ (১১), মো. গোলাম কিবরিয়া ও লিমনকে (১১) আহত অবস্থায় উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থী লিমন এনটিভি অনলাইনকে অভিযোগ করে জানায়, মধ্যাহ্ন বিরতির পর তারা সমাজবিজ্ঞান ক্লাস করছিল। এ সময় বিদ্যালয় সংলগ্ন হাজারবিঘা ছোটলবণগোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীলিপ কুমার নাথ শ্রেণিকক্ষে ঢুকেন। তিনি তাদের চারজনকে টেনে-হিঁচড়ে পাশের একটি কক্ষে নিয়ে আটকে রাখেন। এরপর ওই কক্ষেই তাদের এলোপাতাড়ি চর, কিল, ঘুষি ও লাথি মারতে থাকেন।
লিমন জানায়, মারধরের একপর্যায়ে প্রধান শিক্ষক তার হাত ও আঙুল আড়মোড়া করে মোচড় দেন। ঈসার মাথা ধরে দেয়ালের সাথে আঘাত করেন। এ সময় তিনি বলতে থাকেন, ‘তোরা আমার মোটরসাইকেলের লাইট ভাঙছিস, তোদের আজ মেরে ফেলব’। পরে ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নরেন্দ্রনাথও এসেও তাদের মারধর করেন। সে জানায়, খবর পেয়ে মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ অন্য শিক্ষকরা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
লিমনদের স্কুলের সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক মঞ্জু বেগম বলেন, তিনি শ্রেণিকক্ষে ক্লাস নিচ্ছিলেন। এ সময় দীলিপ কুমার নাথ এসে ক্লাস থেকে চার শিক্ষার্থীকে টেনে-হিঁচড়ে বের করে নিয়ে যান। বিষয়টি তিনি প্রধান শিক্ষকসহ অন্য শিক্ষকদের জানান। পরে প্রধান শিক্ষক মীর মিজানুর রহমান অন্য শিক্ষকদের সাথে নিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি কক্ষ থেকে চারজনকে উদ্ধার করেন।
ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মীর মিজানুর রহমান বলেন, ‘স্কুলের কোনো শিক্ষার্থী অপরাধ করলে তাদের বিচারের দায়িত্ব আমার। বিদ্যালয়ের ভবনের কাজ চলায় আমরা প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টারের নিচের খোলা অংশে ক্লাস নিচ্ছিলাম। বিষয়টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীলিপের কাছে বাড়তি ঝামেলার কারণ মনে হয়েছিল। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি মোটরসাইকেলের লাইট ভাঙার অজুহাতে আমার শিক্ষার্থীদের ওপর দীর্ঘদিনের ক্ষোভ ঝেড়েছেন।
বিষয়টি ইতিমধ্যে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানানো হয়েছে।’
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে মারধরের বিষয়টি স্বীকার করে দিলীপ কুমার নাথ বলেন, ‘আমার মোটরসাইকেলের ইন্ডিকেটর ভেঙে নিয়ে দৌড়ে ক্লাসে ঢুকতে দেখে ওই শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুম থেকে বের করে জিজ্ঞাসাবাদ করি। এ সময় আমি সামান্য চড়-থাপ্পর দিয়েছি। এ ছাড়া একজনকে মাথা ধরে উপরে তুলে ঝাঁকুনি দিয়েছি। পরে আমি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ অন্য শিক্ষকদের কাছে তাদের দিয়ে দেই।’ এ সময় শ্রেণিকক্ষে আটকে রেখে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।
লিমনের মা আয়শা সিদ্দীকা অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার ছেলের হাতের কনুই ও শাহাদাত আঙুল মচকে দিয়েছে। আমি এমন শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মাসুম বিল্লাহ জানান, লিমনের ডান হাতের কনুইয়ের জোড়ায় ও ডান হাতের শাহাদাত আঙুলে মচকানোর আঘাত আছে। এ ছাড়া ঈসার মাথায় ও কিবরিয়ার কানে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।