সংস্কারপন্থী নেতাকে মনোনয়ন, বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল
নরসিংদীর মনোহরদী পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির মূলধারাকে বাদ দিয়ে টাকার বিনিময়ে সংস্কারপন্থী নেতাকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আর এই ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ শনিবার বিকেলে উপজেলার নারান্দীতে প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে উপজেলা বিএনপি। সভা থেকে দলের নেতা-কর্মীরা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে দলীয় মনোনয়ন আবার বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ তোফাজ্জল হোসেন শাহজাহানের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য লে. কর্নেল (অব.) জয়নুল আবেদীন। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মো. আবদুল খালেক, যুগ্ম আহ্বায়ক বাছেদ মোল্লা ভুট্টো, শাহাদাত হোসেন বিপ্লব, শহর বিএনপির সভাপতি বদরুল ইসলাম মোল্লা বাবুল, যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবদুল হান্নান, ইকবাল হোসেন, উপজেলা যুবদলের সভাপতি মিল্টন তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বিপ্লব প্রমুখ।
সভায় উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মো. আবদুল খালেক এনটিভি অনলাইনকে বলেন, তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে শহর, উপজেলা ও জেলা বিএনপি থেকে আমার নাম নির্বাচিত করে দলীয় মনোনয়নের জন্য কেন্দ্রে পাঠিয়েছে। কিন্তু কীভাবে, কোন কৌশলে দলীয় মনোনয়ন সংস্কারপন্থীদের হাতে চলে গেল নেতা-কর্মীরা তা জানতে চান। শোনা যাচ্ছে, সংস্কারপন্থী নেতা সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুলের ষড়যন্ত্রে ও মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এই মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
সভায় লে. কর্নেল (অব.) জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল এক-এগারোর অন্যতম কুশীলব। তিনি জিয়া পরিবার নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে নেতা-কর্মীদের তোপের মধ্যে পড়ে দীর্ঘ নয় বছর বিএনপির রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন। বিএনপির মূলধারার নেতাকে বাদ দিয়ে সেই সংস্কারপন্থী বকুলের এক সমর্থক ও আওয়ামী লীগের দালালকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ায় নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্দ। আমরা দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে দলীয় মনোনয়ন পুনরায় বিবেচনার দাবি জানাচ্ছি।’
বিএনপির নেতা-কর্মীদের অনেকেই জানান, এক-এগারোতে সংস্কারপন্থী নেতা বিএনপির সাবেক মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূইয়াকে সমর্থন ও দল সম্পর্কে দেওয়া বিভিন্ন বিতর্কিত বক্তব্যের কারণে মূল দল থেকে ছিটকে পড়েন সাবেক সাংসদ সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল। কিন্তু বকুলের অনুপস্থিতিতে এরই মধ্যে সেই স্থানে স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য লে. কর্নেল (অব.) জয়নুল আবেদীন। বাগিয়ে নিয়েছিলেন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন। একই সঙ্গে সময়ের পালা বদলে নিজের ভুল উপলব্ধি করে সংস্কারের খোলস পাল্টে মূলধারায় ফিরতে এরই মধ্যে দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন বকুল। এতে করে মূলধারা ও সংস্কারপন্থী ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়ে উপজেলা বিএনপি।
এরই ধারাবাহিকতায় এবারের পৌর নির্বাচনে লে. কর্নেল (অব.) জয়নুল আবেদিনের সমর্থক উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও পৌরসভার সাবেক মেয়র আবদুল খালেককে তৃণমূল থেকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার জন্য কেন্দ্রে প্রস্তাব পাঠানো হয়। তবে বিএনপির মূলধারার রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুল হককে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পাইয়ে দিয়ে নতুন করে রাজনৈতিক আলোচনায় এসেছেন বকুল।
এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মাহমুদুল হক উপজেলা বিএনপির প্রতিবাদ সভাকে সান্ত্বনার সভা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার পরও দেওয়ার জন্য পরিকল্পিতভাবে সংস্কারপন্থী বানানো হয়েছে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া আমাকে ধানের শীষ উপহার দিয়েছেন। আমি মনে করি এটা মার্কা নয়, সেতুবন্ধ। এরই অংশ হিসেবে আমি সবাইকে একমঞ্চে আনার জন্য কাজ করে যাচ্ছি।’