পচা গম নিয়ে বিদেশি জাহাজ দুই মাস ধরে বন্দরে
দীর্ঘ দুই মাস ধরে পচা ও নিম্নমানের গমবোঝাই এমভি পিনটেল নামে জাহাজটি মংলা বন্দরে অবস্থান করছে। কবে নাগাদ এটি বন্দর ছেড়ে যাবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, আমদানিকারক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এখনো গম খালাসের চেষ্টা করছে। জাহাজটিতে ৫২ হাজার ৫০০ টন গম আমদানি করা হয়েছিল। চট্টগ্রাম বন্দরে ৩১ হাজার ৫০০ টন গম খালাসের পর বাকি ২১ হাজার টন গম নিয়ে জাহাজটি ১২ অক্টোবর মংলা বন্দরে ভেড়ে। আটকে যাওয়া গমের মূল্য প্রায় ৪৪ কোটি টাকা। সাইপ্রাসের পতাকাবাহী এমভি পিনটেল গম নিয়ে মংলা বন্দরের হারবারিয়ায় নোঙর করে। তিন-চার দিনের মধ্যে গম খালাসের জন্য খালিদ ব্রাদার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ করা হয়। ১৩ অক্টোবর আমদানি গম খালাস তদারকি কমিটি জাহাজের গম পরিদর্শন করে তা খালাস না করার সিদ্ধান্ত নেয়।
বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে প্রচার হলে গম পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। ঢাকা থেকেও নিম্নমান ও খাবার অনুপযোগী বলে প্রতিবেদন দেওয়া হলে খাদ্য অধিদপ্তর এ গম খালাস না করার সিদ্ধান্ত নেয়। খাদ্য অধিদপ্তর তাদের সিদ্ধান্ত আমদানিকারক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কমপ্লেক্স কনসালট্যান্ট লিমিটেডকে জানালেও রহস্যজনক কারণে জাহাজটি এখন পর্যন্ত এ বন্দরে পড়ে রয়েছে।
এ ব্যাপারে সম্প্রতি জাহাজটির স্থানীয় এজেন্ট লিডমন্ড শিপিং লিমিটেডের পরিচালক আখতারুজ্জামান জানান, এমভি পিনটেল মংলা বন্দর ত্যাগ করার প্রক্রিয়া চলছে। গমবোঝাই অবস্থাতেই আগামী সপ্তাহে এটি এ বন্দর ছেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘জাহাজটি বর্তমানে পশুর চ্যানেলের ৩ নম্বর মুরিং বয়ায় অবস্থান করছে। তাঁরা জাহাজটিতে অবস্থানরত ২০ ক্রুর জন্য নিয়মিত বিভিন্ন সামগ্রী সরবরাহ করছেন।’
এদিকে, খুলনার আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাজী নূরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, খাদ্য বিভাগ এ গম খালাস করবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন আমদানিকারক জাহাজ নিয়ে বা গম কী করবে, সেটি তাদের বিষয়। তিনি জানান, খাদ্য অধিদপ্তর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কমপ্লেক্স কনসালট্যান্ট লিমিটেডকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। তাদের আগামীতে গম আমদানির কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না।
খাদ্য অধিদপ্তরের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ফ্রান্স থেকে এ গম জাহাজে বোঝাই করা হয়েছিল এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে। সে হিসাবে দীর্ঘ কয়েক মাস গম এ জাহাজে রয়েছে। এতদিন জাহাজে গম থাকলে তার গুণগতমান নষ্ট হওয়ারই কথা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমভি পিনটেল জাহাজের লোকজন চোরাপথে কিছু গম স্থানীয় চোরাকারবারির কাছে বিক্রি করেছে। জাহাজটি মংলা বন্দরের হারবারিয়া এলাকায় অবস্থানকালে এ গম পাচার করে দিয়েছে। হারবারিয়া এলাকাটি এতটাই দুর্গম যে, সেখানে মংলা বন্দরের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। ফলে এই নিম্নমানের গম বাজারে প্রবেশ করলে মানবদেহে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ ব্যাপারে আমদানিকারক কমপ্লেক্স কনসালট্যান্ট লিমিটেডের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলেও তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল রিয়াজ উদ্দিন আহম্মেদ জানান, পচা ও নিম্ন মানের গম আমদানির সঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এটি আমদানিকারক ও খাদ্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের বিষয়।