কালাইয়ে রাজাকারের সন্তানদের মনোনয়ন না দেওয়ার দাবি
জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দল থেকে রাজাকারের সন্তানদের মনোনয়ন না দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থী ও সমর্থকরা।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে জয়পুরহাট প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা এই দাবি জানান। তাঁদের অভিযোগ, উপজেলার আহম্মেদাবাদ, মাত্রাই ও পুনট ইউনিয়নে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থীদের মধ্যে তিনজন একাত্তরে রাজাকারের সন্তান রয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে ওই তিন ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ থেকে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী তিন প্রার্থীর উপস্থিতিতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মাত্রাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এনামুল হক ফকির।
ওই লিখিত অভিযোগে জানানো হয়, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে তৎকালীন ক্ষেতলাল থানা শান্তি ও প্রতিরক্ষা কমিটি গঠিত হয়। ওই কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন বেগুন গ্রামের সাইদুর রহমান চৌধুরী। সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মুন্দাইল গ্রামের নুরুল ইসলাম চৌধুরী (মৃত)। ৬৪ সদস্যের ওই কমিটির সহসম্পাদক ছিলেন বালাইট গ্রামের আব্দুল গফুর মন্ডল (মৃত), শমসিরা গ্রামের আজাহারুল ইসলাম তালুকদার (মৃত) এবং সদস্য ছিলেন পুনটের মোহাম্মদ আলী ফকির (মৃত)। এ তিনজনের সন্তান যথাক্রমে নুর মোহাম্মদ মণ্ডল কালাম আহম্মেদাবাদ, আ ন ম শওকত হাবিব লজিক মাত্রাই এবং আব্দুল কুদ্দুস ফকির পুনট ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। শওকত হাবিব মাত্রাই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যানও। তিনজনই আওয়ামী লীগের সক্রিয় নেতা। কোনো রাজাকার ও তাঁর সন্তানদের হাতে নৌকা প্রতীক তুলে না দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন থেকে ওই তিন সম্ভাব্য চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীকে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে পুনট ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান মোকছেদ আলী ফকির সাংবাদিকদের আরো জানান, তৎকালীন ক্ষেতলাল থানা শান্তি ও প্রতিরক্ষা কমিটির সদস্যের (রাজাকার) সন্তানদের চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন না দেওয়ার জন্য তিনি এরইমধ্যে দলের সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে আবেদন পাঠিয়েছেন।
এ সংবাদ সম্মেলনে মাত্রাই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী অধ্যক্ষ মনোয়ার হোসেন, আহম্মেদাবাদ ইউনিয়নের মনোনয়ন প্রত্যাশী সিনজুনুর রহমান এলিন, নুর আলম সবুজ, মশিউর রহমান বকুল ও তাঁদের সমর্থকরা উপস্থিত ছিলেন ।
এ ব্যাপারে মোবাইল ফোনে মাত্রাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আসন্ন নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী আ ন ম শওকত হাবিব লজিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিজেকে ছাত্র জীবন থেকেই আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার দাবি করে সাংবাদিকদের বলেন, ‘তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে- তা সত্য নয়। সামনে ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মিথ্যা অভিযোগ করে তারা ফায়দা লুটতেই এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে।’
জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও পুনট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস ফকির জানান, তাঁদের পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাঁর প্রয়াত বড় ভাই কালাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। বর্তমান চেয়ারম্যান তাঁর ভাতিজা। তাঁদের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে প্রতিপক্ষরা এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে। যা সত্য নয়।
কালাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কালাই পৌর মেয়র হালিমুল আলম জন বলেন, ‘দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোনো শর্ত আছে তা আমার জানা নেই।’
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম সোলায়মান আলী সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাজাকার বা তাদের সন্তানদের দলীয় মনোনয়ন দেওয়া যাবে না’ এ ধরনের শর্ত যদি থাকে, আর যদি তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণাদি পাওয়া যায়, তা হলে বিষয়টি দলের কেন্দ্রে উপস্থাপন করা হবে। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।’