ইউপি নির্বাচন, ‘টাকার বিনিময়ে নাম যাচ্ছে ঢাকায়’
ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে মনোনয়নকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার আওয়ামী লীগের রাজনীতি। অভিযোগ উঠেছে চেয়ারম্যান পদে টাকার বিনিময়ে মনোনয়নের জন্য নাম পাঠানো হচ্ছে ঢাকায়।
উপজেলার দুটি ইউনিয়ন থেকে এ অভিযোগ এসেছে। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা অভিযোগ করেছেন নিয়মের বাইরে গিয়ে ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে টাকার বিনিময়ে মনোনয়নের জন্য নাম পাঠানো হচ্ছে ঢাকায়।
ওই সিদ্ধান্ত বাতিল এবং প্রকৃত আওয়ামী লীগের কর্মীদের মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে আজ মঙ্গলবার দলটির স্থানীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকরা পৃথক দুই এলাকায় মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ ও সংবাদ সম্মেলন করেছে।
উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে দ্বিতীয় দফায় আগামী ৩১ মার্চ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলা সদরের মেডিকেল মোড়ে মানববন্ধন, সমাবেশ ও বিক্ষোভ করেছে উপজেলার টংভাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ। এতে ওই ইউনিয়নের নেতাকর্মী ছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতাও উপস্থিত ছিলেন। ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন শেষে বেশ কয়েকশ নারী ও পুরুষ নিয়ে বের হওয়া বিক্ষোভ মিছিলটি উপজেলা সদরে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে আওয়ামী লীগের উপজেলা কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়।
মানববন্ধনে ১৯ বছর ধরে টংভাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন উল্লেখ করে আতিয়ার রহমান আতা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি দুইবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও ষড়যন্ত্র করে হারিয়ে দেওয়া হয়। আর এবার আমাকে বাদ দিয়ে সদ্য আওয়ামী লীগে যোগদানকারী এবং যুদ্ধাপরাধীর ছেলে সেলিম হোসেনকে মনোনয়ন পাইয়ে দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। যা হয়েছে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে।’
নির্বাচনী মাঠ থেকে সরে যেতে তাঁকে দুজন আওয়ামী লীগ নেতার মাধ্যমে ৩০ লাখ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে দাবি করেন আতিয়ার রহমান। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘যুগের পর যুগ আওয়ামী লীগের দুর্দিনে পাশে থাকার পরও আমাদের মনোনয়ন বঞ্চিত করার পাঁয়তারা করছেন স্থানীয় নেতারা।’ বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হাসান মেহেদী আপন বলেন, ‘জনমত জরিপ ও গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অমান্য করে শুধু টাকার বিনিময়ে আতিয়ার রহমানকে বঞ্চিত করে সেলিমকে মনোনয়ন দিতে ঢাকায় প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও টংভাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবদুল মজিদ বলেন, ‘মনোনয়ন সিলেকশন বোর্ডে উপস্থিত থেকে আতিয়ারকে মনোনয়ন দিতে আমি মতামত দিলেও এখন শুনছি কারসাজির মাধ্যমে অন্যকে মনোনয়ন দিতে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।’
স্থানীয় একাধিক নেতা জানিয়েছেন, টংভাঙ্গা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান সেলিম হোসেন গত ১৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত এক যোগদান সভার মাধ্যমে জাতীয় পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। এ ছাড়া তাঁর বাবা আবুল হোসেন ও ভাই মাসুদের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে। মানববন্ধনে অংশ নেওয়া পূর্ব বাড়াইপাড়া গ্রামের ইউসুফ আলী মাস্টারের ছেলে রোস্তম আলী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সেলিমের বাবা স্থানীয় কয়েকজনসহ আমাদের বাড়িতে গিয়ে বাবাকে ক্যাম্পে ডেকে নিয়ে আসার পর বাবার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।’
এদিকে সকালে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে উপজেলার সানিয়াজান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ। সানিয়াজান বাজারে অনুষ্ঠিত ওই কর্মসূচিতে কয়েকশ আওয়ামী লীগের কর্মী ও সমর্থক অংশ নেন। এ সময় সেখানে বক্তব্য দেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল গফুর ও সাধারণ সম্পাদক সাহেবুর রহমান। বক্তারা অভিযোগ করেন, তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামত উপেক্ষা করে দলের একটি কুচক্রী মহল সদ্য যোগদানকারী হাশেম আলী নামের একজনকে মনোনয়ন দিতে প্রস্তাব পাঠিয়েছে।