নরসিংদীতে কলেজছাত্রী হত্যা : আখ ব্যবসায়ীর ফাঁসি
নরসিংদীর বেলাব উপজেলায় কলেজছাত্রী রিনভী আক্তার দীপা (২১) হত্যা মামলায় একজনকে ফাঁসির দণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত।
আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় জেলা ও দায়রা জজ বেগম ফাতেমা নজিব এ রায় দেন। নিহত কলেজছাত্রী বিবিএর প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি বেলাব সৈয়দপাড়ার সৈয়দ সামসুজ্জামানের মেয়ে।
ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত আসামি হলেন- একই উপজেলার কাজিরটেক গ্রামের মিয়ার উদ্দিনের ছেলে আখ ব্যবসায়ী আল-আমিন (২২)।
আদালত সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৭ মে বিকেলে দীপা বাড়ির পাশে হাঁটাহাঁটি করছিলেন। এ সময় আল-আমিন তাঁকে ধারালো দা দিয়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করেন। এতে তাঁর মাথার মগজ বের হয়ে আসে এবং দুই হাতের বিভিন্ন জায়গায় কেটে যায়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর তাঁর মৃত্যু হয়।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, সাজাপ্রাপ্ত আসামি আল-আমিন কলেজছাত্রী দীপাকে মনে মনে ভালোবাসতেন। তাঁকে কারো সাথে কথা বলতে দেখলে আলামিন সহ্য করতে পারতেন না। ঘটনার দিন দীপাকে তার সহপাঠী দীপুর সঙ্গে কথা বলতে দেখলে আল-আমিন ক্ষিপ্ত হয়ে যান। রাগের বশবর্তী হয়ে তিনি দীপাকে ধারালো দা দিয়ে আঘাত করেন। আদালত নয় মাস তদন্তের পর ১৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এ রায় দেন। রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) ন ম রুহুল আমীন এবং আসামিক্ষে মামলায় ছিলেন অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ।
নিহত ছাত্রীর পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বখাটের অত্যাচার থেকে বাঁচতে টাঙ্গাইলে বোনের বাসায় থেকে টাঙ্গাইল করটিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে বিবিএ প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছিলের দীপা। নিজ বাড়িতে এসেছিলেন দুইদিনের জন্য। ভয়ে দূরে কোথাও যেতেন না। বের হলেও বাড়ির কাছেই থাকতেন। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। শেষ পর্যন্ত গত বছরের ৭ মে বিকেল ৪টার দিকে নরসিংদীর বেলাব থানার বাজনাব গ্রামের ডা. কামরুজ্জামান খানের বাড়ির সামনে একা পেয়ে দীপাকে ধারালো দা দিয়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে পালিয়ে যান বখাটে আল আমিন। আহত অবস্থায় দীপাকে প্রথমে বেলাব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত পৌনে ১০টার দিকে দীপা মারা যান। এ ঘটনায় আল-আমিনকে আসামি করে বেলাব থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের ভাই সৈয়দ আতিকুজ্জামান অংকুর। বেলাব থানা পুলিশ বখাটে আল আমিনকে বাজনাব এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি ওই কলেজছাত্রীকে দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্ত করার কথা স্বীকার করেন।
সৈয়দ আতিকুজ্জামান অঙ্কুর সাংবাদিকদের বলেন, ‘দীপা আমার ছোট ছিল। লেখাপড়ায় খুব ভালো ছিল। দীর্ঘদিন ধরে আমাদের গ্রামের বখাটে আল আমিন ওকে উত্ত্যক্ত করত। এ কারণে দীপাকে টাঙ্গাইলে বড় বোনের বাসায় পাঠিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে কয়েক দিনের জন্য বাড়িতে আসেন দীপা। এর পরও ওই বখাটে দীপাকে উত্ত্যক্ত করতেন। বিষয়টি বাড়াবাড়ি পর্যায়ে গেলে আল আমিনকে একাধিকবার ধমক এবং তাঁর বাসায় বিচার ও অভিযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।’
মেয়ের খুনির ফাঁসির আদেশ হওয়ায় খুশি বাবা সৈয়দ সামসুজ্জামান। অশ্রুসিক্ত বাবা বলেন, ‘মেয়েকে তো আর ফিরে পাব না। মেয়ের খুনির বিচার হয়েছে এটাই এখন সান্ত্বনা।’ তিনি আরো বলেন, ‘এখন আমাদের একটাই দাবি, ফাঁসির আদেশ যেন দ্রুত কার্যকর করা হয়।’
তবে রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে আসামিপক্ষের অইনজীবী শেখ মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ বলেন, ‘আসামি ন্যায়বিচার পাননি। তাই এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করব আমরা।’