বাউফলে আ. লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সংঘর্ষ, ভাঙচুর-লুটপাট
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নওমালা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত ও ‘বিদ্রোহী’ চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় অন্তত ১০টি বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। আহত হয়েছেন ২০ জন।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ইউনিয়নের হোলাবুনিয়া বাজারে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট কামাল হোসেন বিশ্বাসের ও ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী শাহজাদা হাওলাদারের সমর্থকদের মধ্যে প্রথম দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এর জের ধরে আজ শুক্রবার সকালে ফের ইউনিয়নের নয়াহাটে সংঘর্ষে জড়ায় দুই পক্ষের সমর্থকরা। এ ঘটনার পর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো ইউনিয়নজুড়ে। এলাকায় এখন ভুতুড়ে অবস্থা বিরাজ করছে।
বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুদুজ্জামান জানান, এ সন্ত্রাসী ঘটনায় কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এ ঘটনায় আহতদের মধ্যে ইসমাইল হাওলাদার (৬৩), নাসির মৃধা, সোহেল সিকদার (২২), সাইফুল সর্দার (৩৫), সত্তার সর্দার, (৫০), জয়নব বিবি (৬৯), জালাল (৪৫), ইসমাইল (৩৪), মিলন মৃধা (৩৭), রাসেল (২০) এবং নজরুলকে স্থানীয় বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং ইসমাইল হোসেন হাওলাদারকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এলাকাবাসী ও আহতরা জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ডিসি সড়কের হোলাবুনিয়া বাজারে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ও শ্রমিক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহজাদা হাওলাদারের সমর্থকরা ঘোড়া মার্কার প্রচার মিছিল বের করেন। এ সময় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট কামাল হোসেন বিশ্বাসের সমর্থক ও যুবলীগ নেতা আলমগীর হোসেন নৌকা মার্কার প্রচারণা চালান।
এক ফাঁকে আলমগীর তাঁর চাচাতো ভাই মোশারেফ মৃধাকে বিদ্রোহী প্রার্থীর ঘোড়া মার্কার পক্ষে কাজ না করার কথা বলেন। এ নিয়ে কথাকাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও মোটরসাইকেল ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ সময় লোকজন ছোটাছুটি শুরু করে এবং মুহূর্তেই দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। সড়কে যান চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়।
স্থানীয়রা আরো জানান, এ খবর ছড়িয়ে পড়লে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট কামাল হোসেনের সমর্থক যুবলীগ নেতা আলমগীরের নেতৃত্বে ১৫-২০ জনের একটি দল বিদ্রোহী প্রার্থী শাহজাদা হাওলাদারের সমর্থক আতাহার মৃধা, চান মিয়া মৃধার ঘরে হামলা চালায় এবং তাদের মারধর করে।
পরে বিদ্রোহী প্রার্থী শাহজাদা হাওলাদারের সমর্থক রুহুল, হাসান, সোহাগ, ফয়সাল, ছালাম, শামীম গাজী, রফিক মাঝি ও মামুনের নেতৃত্বে ২৫-৩০ জন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রতন আলী মৃধা ও নওমালা আবদুর রশিদ খান ডিগ্রি কলেজের উপাধাক্ষ আবদুল মালেক মিয়ার ঘরে ঢুকে দুটি টিভি, দুটি ফ্রিজ, শোকেস, আলমারি, থালা-বাসন, সোফা সেট তছনছ করে এবং লুটপাট চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে।
পরে রাত ১০টার দিকে তারা আবুল মৃধা, নজরুল, সিরাজ মৃধা, ফরহাদ মজুমদার, রফিক মৃধা, সিদ্দিক মোল্লা, কায়কোবাদের ঘর, ফারুক মজুমদারের দোকানঘর ভাঙচুর করে বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন।
ওই ঘটনার জের ধরে আজ সকালে নৌকা মার্কার সমর্থক ছাত্রলীগ নেতা সোহেল সিকদার মোটরসাইকেলে করে নয়াহাট বাজারে পৌঁছালে ঘোড়া মার্কার সমর্থকরা তাঁকে পিটিয়ে আহত করে। পরে নৌকা মার্কার সমর্থকরা ঘোড়া মার্কার নাসির মৃধা, সাইদুল সর্দার, সাগরকে পিটিয়ে আহত করে। এসব ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
নওমালা আবদুর রশিদ খান ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ আবদুল মালেক জানান, তার ঘরের রান্নার পাতিলটি পর্যন্ত নেই।
নওমালা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বর্তমান চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট কামাল হোসেন বিশ্বাস জানান, ‘ঘোড়া মার্কার প্রার্থী শাহজাদা হাওলাদার স্থানীয় জামায়াত-বিএনপির ক্যাডারদের নিয়ে পরিকল্পিতভাবে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও এক উপাধ্যক্ষের ঘরসহ ১০টি বাড়ি ভাঙচুর, লুটপাট ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়।’
ঘোড়া মার্কার প্রার্থী ও শ্রমিক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহজাদা হাওলাদার জানান, তাঁর নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।