শুরু হলো ভোট
শুরু হয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোট। এবারই সারা দেশে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে একযোগে শুরু হয়েছে দেশের ৩৪টি জেলার ৭৩৪টি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) ভোটগ্রহণ।
সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ইউপি এলাকায় টানা ভোটগ্রহণ চলবে। এটি স্থানীয় সরকারের সর্বনিম্ন স্তরের সবচেয়ে বড় নির্বাচন হওয়ায় দেশব্যাপী তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের মাঝে এখন বিরাজ করছে উৎসব-আমেজ। সারা দেশে ব্যাপক হারে সহিংসতাও হয়েছে। নিহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। তারপরও গ্রামের মানুষের সঙ্গে ভোট উৎসবে যোগ দিতে শত শত মানুষ ছুটে যাচ্ছেন নিজের এলাকায়।
বার্তা সংস্থা বাসসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কমিশনের পক্ষ থেকে নির্বাচনী এলাকায় মাঠে টহলে রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), পুলিশ, কোস্টগার্ড ও আনসারসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এক লাখ ৮০ হাজার সদস্য। একই সঙ্গে ৩৪ জেলার ১০১টি উপজেলায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের পাশাপাশি বিচারিক হাকিমরাও অপরাধ তদারকিতে মাঠে রয়েছেন।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি প্রথম দফায় নির্বাচনে ৭৫২ ইউনিয়নে ভোট গ্রহণের জন্য তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন কারণে ১৭টি ইউনিয়নের তফসিল বাতিল ঘোষণা করা হয়। এ নির্বাচনে এরই মধ্যে ৫৪ জন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। বিনা ভোটে নির্বাচিতরা সবাই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী।
এছাড়া প্রথম পর্বের টাংগাইল নাগরপুর উপজেলার ১১ ইউনিয়নের নির্বাচন ২৩ মার্চ এবং টেকনাফের হ্নীলা ও হোয়াইক্যং ইউনিয়নের নির্বাচন হবে আগামী ২৭ মার্চ।
এরই মধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে একাধিকবার অভিযোগ করা হয়েছে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অনেক স্থানে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের বাধার কারণে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরা তাঁদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি। বিভিন্ন স্থানে বিএনপি প্রার্থীদের নানাভাবে নির্বাচনী প্রচার কাজে বাধা দেওয়া হয়েছে। হামলা-ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে।
এ ছাড়া বিভিন্ন স্তানে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও দলটির বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
এসব ব্যাপারে প্রধান নির্বাচন কমিশনারও (সিইসি) সোমবার ভোটপূর্ব সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘নির্বাচনী সহিংসতা আমরা কমিয়ে আনতে পারছি না। কারণ অন্যান্য ডিপার্টমেন্টের কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত সহযোগিতা পাচ্ছি না।’
প্রথম দফার নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মোট তিন হাজার ৩৪ জনসহ মোট ৩৬ হাজার ৪৫৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এতে প্রায় সাত হাজার ৮৭টি কেন্দ্রে এক লাখ ২১ হাজার ১৯৫ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োজিত আছেন বলে ইসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, ইউপিতে প্রথম ধাপে এরই মধ্যে ৫৪ জন চেয়ারম্যান, ১৭৯ জন সাধারণ সদস্য ও ৫৪ জন সংরক্ষিত সদস্য পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ২২ মার্চের ভোটে তিন হাজার ৩৪ জন চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য পদে ২৫ হাজার ৮৪৭ জন ও সংরক্ষিত পদে সাত হাজার ৫৭৫ জন প্রার্থী রয়েছেন। এরপর আরো পাঁচ ধাপে দেশের বাকি সাড়ে তিন হাজার ইউপিতে ভোট হওয়ার কথা রয়েছে।
এ ধাপে সাত হাজার ৮৭টি ভোটকেন্দ্রে ভোট হচ্ছে। এসব ভোটকেন্দ্রে বুথের সংখ্যা ৩৮ হাজার ৩৬টি। এ হিসাবে প্রতি কেন্দ্রে একজন করে সাত হাজার ৮৭ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, প্রতি বুথে একজন করে ৩৮ হাজার ৩৬ জন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এবং প্রতি বুথে দুজন করে ৭৬ হাজার ৭২ জন পোলিং কর্মকর্তা কাজ করছেন। মোট এক লাখ ২১ হাজার ১৯৫ জন কর্মকর্তা ভোটগ্রহণ করছেন। এতে পুরুষ ভোটার ৫৯ লাখ ৯৫ হাজার ২৬৯ জন এবং নারী ভোটার ৫৯ লাখ ৪২ হাজার ৬৯৪ জন।
নির্বাচনের কারণে ৭৩৪টি ইউপিতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ফলে নির্বাচনী এলাকায় সব অফিস বন্ধ রয়েছে।
ইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী প্রথম ধাপে ২২ মার্চ ৭৩৪টি, ২৩ মার্চ নাগরপুরে ১১টি এবং ২৭ মার্চ টেকনাফের দুটি ইউপির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরপর দ্বিতীয় ধাপে ৩১ মার্চ, তৃতীয় ধাপে ২৩ এপ্রিল, চতুর্থ ধাপে ৭ মে, পঞ্চম ধাপে ২৮ মে ও ষষ্ঠ ধাপে ৪ জুন ভোট হওয়ার কথা রয়েছে।