ভোলায় নির্বাচনী সংঘর্ষে প্রার্থীসহ আহত অর্ধশত
ভোলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রচারণার সময় দুই সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের শান্তিরহাট বাজারে এ সংঘর্ষে দুই সদস্য প্রার্থীসহ কমপক্ষে অর্ধশত আহত হয়েছেন। এ সময় ভাঙচুর করা হয়েছে বেশ কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, নির্বাচনী অফিস ও ঘরবাড়ি।
আহতদের গতকাল রাতেই ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহতদের কয়েকজন জানান, গতকাল রাতে ইউপি নির্বাচনে সদস্য প্রার্থী মো. মিলন মেম্বার এবং মোতাচ্ছেন বেপারীর সমর্থকরা বাজারে মিছিল বের করে। এতে উভয় পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এরই একপর্যায়ে তাঁদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষের সময় একে অপরের ওপর ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় পুরো বাজারের সকল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পুরো এলাকা। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলে এই সংঘর্ষ। এ সময় হামলাকারীরা শান্তিরহাট বাজারের বেশ কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, নির্বাচনী অফিস ও বসতঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর এবং লুটপাট করে। খবর পেয়ে ইলিশা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) মো. বশির আহমেদ ফোর্স নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।
একই সঙ্গে দ্রুত ঘটনাস্থলে সাংবাদিকরা পৌঁছালে তাঁদের ছবি তুলতে ও ভিডিও করতেও বাধা দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, আহতদের উদ্ধার করে অ্যাম্বুলেন্সে আনতে বাধা দেওয়া হয় এবং অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুরের চেষ্টা করা হয়। পরে পুলিশ ও স্থানীয় ব্যক্তিদের সহযোগিতায় আহতদের বিভিন্ন বাসাবাড়ি থেকে উদ্ধার করে গভীর রাতে ভোলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ঘটনায় মিলন মেম্বার ও মোতাচ্ছিন বেপারী এবং মহিলাসহ কমপক্ষে অর্ধশত মানুষ আহত হয়। রাতেই ঘটনাস্থলে সেখানে আহতদের আত্মীয়স্বজনদের আহাজারি দেখা যায়। প্রতিপক্ষের আবারও হামলার আশঙ্কায় গ্রামের মধ্যে লুকিয়ে তাদের স্থানীয় গ্রাম্য চিকিৎসরা চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। পুরো এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। জানা গেছে, উভয় সদস্য প্রার্থীই আওয়ামী লীগ করেন।
এ ব্যাপারে মিলন মেম্বার বলেন, ‘আমার সমর্থকদের ওপর পূর্বপরিকল্পিতভাবে মোতাচ্ছিন বেপারী ও তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনী হামলা চালিয়েছে। কুপিয়ে ও পিটিয়ে আমার কমপক্ষে ২৫ জন সমর্থককে আহত করেছে তারা। শুধু তাই নয়, আমার দুর্নাম করার জন্য নিজেরাই বেশ কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, নির্বাচনী অফিস ও বসতঘর ভাঙচুর করেছে।’
অন্যদিকে মোতাচ্ছিন বেপারী জানান, তিনিসহ তাঁর সমর্থকরা একটি মিছিল বের করেন শান্তিরহাট বাজারে। মিছিলটি মাঝখানে এলেই চারিদিক থেকে মিলন মেম্বারসহ তার সন্ত্রাসী বাহিনীরা হামলা চালায়। এ সময় তারা বেশ কয়েকটি গুলি করে। তিনি বলেন, ‘শুধু তাই নয়, কুপিয়ে ও পিটিয়ে আমাকে এবং নারীসহ কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০ জনকে আহত করেছে। ভাঙচুর করেছে নৌকা প্রতীকের নির্বাচনী অফিস ও পাঁচ থেকে ছয়টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং বসতঘর। তারা বাজারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আজ শুক্রবার বেলা ১১টায় বাজারে আমার আরো চার থেকে পাঁচজন কর্মীকে মারধর করেছে।’
এদিকে ইলিশা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (উপপরিদর্শক) মো. বশির আহমেদ বলেন, ‘দুই গ্রুপ প্রচারণা চালানোর সময় একে অপরের ওপর হামলা চালিয়েছে। ভাঙচুর করেছে বেশ কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, নির্বাচনী অফিস ও বসতঘর। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। বর্তমানে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
উল্লেখ্য, এই ইউনিয়নে আগামী ৩১ মার্চ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।