পাঁচ কিমির মধ্যে চারটি করাত কল
করাতকল স্থাপন নীতিমালায় বলা হয়েছে, বনাঞ্চলের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো করাতকল স্থাপন করা যাবে না। অথচ শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার গারো পাহাড়ের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে চলছে চারটি করাত কল।
এ বিষয়ে গত ২০ মার্চ রাংটিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা কবির হোসেনকে সহকারী বন সংরক্ষকের দপ্তর থেকে সহকারী বন সংরক্ষক স্বাক্ষরিত এক পত্রে (নম্বর ২.০১. ০০০০. ৬৩৪. ১৭. ২০১৬. ৩৩ এবং তারিখ ৩.৩.২০১৬) গারো পাহাড় সংলগ্ন বাগেরভিটা কান্দুলী এলাকার করাতকলগুলো সম্পর্কে প্রতিবেদন পাঠাতে বলা হয়।
রেঞ্জ কর্মকর্তা কবির হোসেন এ তাঁর প্রতিবেদনে জানান, ‘বাগেরভিটা কান্দুলী মৌজায় অবস্থিত চারটি করাতকলই বনাঞ্চল থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে অবস্থিত। তিনটি করাতকলের কাগজপত্রেও আছে গড়মিল। আর মুক্তার হোসেনের মালিকানাধীন করাত কলটির কোনো কাগজপত্রই সঠিক নেই।’
সম্প্রতি মুক্তার হোসেনের মালিকানাধীন করাতকলটি স্থাপন করা হয়। এই করাতকলটির লাইসেন্সের ঠিকানা শ্রীবরদী উপজেলার হলেও কলটির মালিক ঝিনাইগাতী উপজেলার সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে কলটি স্থাপন করেছেন। করাতকলটি স্থাপনের পর পরই ঝিনাইগাতী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা ও রাংটিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা কবির হোসেন করাতকলটি বন্ধ করে দেন। কিন্তু বন্ধ করার পর কয়েকদিনের মধ্যেই আবার করাতকলটি চালু করেন মালিক মুক্তার হোসেন।
এ ব্যাপারে কলটির মালিক মুক্তার হোসেন বলেন, ‘আমি সব দিক ম্যানেজ করেই কলটি চালাচ্ছি।’ একপর্যায়ে তিনি সংশ্লিষ্ট সবার উদ্দেশে দম্ভোক্তি করে বলেন, ‘আমি করাতকল চালিয়ে যাব, কেউই আমার কিছু করতে পারবে না।’
এ ব্যাপারে সহকারী বন সংরক্ষক রেজাউল করিম বলেন, ‘করাতকল নীতিমালায় বনাঞ্চলের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে করাতকল স্থাপন করা যাবে না। মুক্তার হোসেনের করাতকলটি সম্পূর্ণ অবৈধ। অন্য তিনটি করাতকলেরও কাগজপত্র ঠিক নেই। আমি রেঞ্জ কর্মকর্তাকে এসব কল উচ্ছেদের জন্য বলেছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘ঝিনাইগাতী উপজেলায় একমাত্র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হচ্ছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। যেহেতু এখানে ভূমি কর্মকর্তার পদটিও শূন্য। সুতরাং ম্যাজিস্ট্রেটের স্বল্পতার জন্য আমাদের কাজে দেরি হচ্ছে।’
স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, দুর্বৃত্তরা বনের শাল, সেগুন গাছগুলো কেটে নিয়ে বিক্রি করে দিচ্ছে করাতকল মালিক ও কাঠ ব্যবসায়ীদের কাছে। আর এসব করাতকল মালিক ও কাঠ ব্যবসায়ীরা বনের চোরাই গাছ বিক্রি করে হচ্ছেন অঢেল অর্থের মালিক। আর এ কারণেই এক সময়ের গারো পাহাড়ের গহীন বনাঞ্চল এখন প্রায় উজাড়ের দিকে।