যৌতুকের জন্য ইতির জীবনের ইতি, বিচার দাবি
লক্ষ্মীপুরে যৌতুক না পেয়ে স্ত্রী সুমনা আক্তার ইতিকে (১৯) হত্যার পর ঝুলিয়ে রাখার অভিযোগ উঠেছে স্বামী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে।
সাড়ে তিন বছর আগে স্কুলছাত্রী ইতিকে জোর করে তুলে নিয়ে বিয়ে করেন জেলার রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চরমোহনা গ্রামের ইব্রাহিম খলিল। হত্যার ঘটনায় করা মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও জড়িতদের বিচার চেয়ে আজ শুক্রবার রায়পুর পৌর শহরের একটি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে নিহতের পরিবার।
লিখিত বক্তব্যে নিহতের মা সোনাপুরের চরবগা গ্রামের বিধবা জাহানারা বেগম বলেন, ‘এক লাখ টাকা যৌতুক না পেয়ে আমার মেয়ে ইতিকে ২ এপ্রিল স্বামী ইব্রাহিম খলিল, শ্বশুর নূরনবী দুলাল, শাশুড়ি তাছলিমা খাতুন রেখাসহ পরিবারের সদস্যরা মিলে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। পরে তারা ইতির মরদেহের গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঘরের ভেতরে ঝুলিয়ে রাখে। এরপর সে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার চালায়। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। ঘটনার সময় ইতির বাঁ হাত ভাঙা এবং পাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন ছিল।’ কিন্তু গলায় কোনো দাগ ছিল না- লোকজন তা প্রত্যক্ষ করেছে। হত্যার ঘটনায় তিনি মঙ্গলবার ৫ এপ্রিল লক্ষ্মীপুর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আমলি আদালত ১-এ হত্যা মামলা করেছেন। এতে স্বামী ইব্রাহিম খলিলসহ তাঁর পরিবারের আট সদস্যকে আসামি করা হয়। আদালত মামলাটি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নিতে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন।
নিহতের মা আরো বলেন, ইতিকে ২০১২ সালের ৫ অক্টোবর ইব্রাহিম খলিল জোর করে তুলে নিয়ে যান। তখন সে রাখালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী। এ ঘটনায় তখন থানায় সাধারণ ডায়েরি (যার নম্বর : ২৫৩, তারিখ ৬-১০-২০১২) করা হয়। পরে তিনি জানতে পারেন, ইব্রাহিম তাঁর মেয়েকে বিয়ে করেছেন। এর পর থেকে হত্যার আগ পর্যন্ত ইতি ওই বাড়িতেই ছিল। বিয়ের পর কারণে-অকারণে স্বামী ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা ইতিকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করত। সম্প্রতি বিদেশ যাওয়ার জন্য বাবার বাড়ি থেকে এক লাখ টাকা যৌতুক এনে দেওয়ার জন্য ইতিকে চাপ দেয়। ইতি পরিবারের আর্থিক অক্ষমতার কথা স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়িসহ অন্যদের কাছে বলেন। এ সময় তারা ব্যঙ্গ করে বলে, ‘টাকা না আনতে পারলে আত্মহত্যা করে আমাদের মুক্তি দাও, তা না হলে তোমাকে হত্যা করে ঝুঁলিয়ে রাখা হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে নিহতের ভগ্নিপতি কামাল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
এ ব্যাপারে রায়পুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এ কে এম ফজলুল হক বলেন, ‘মামলার বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’