বরগুনায় পুলিশের বিরুদ্ধে আইনজীবী নির্যাতনের অভিযোগ
বরগুনায় একজন আইনজীবীকে থানায় নিয়ে ‘নির্যাতনের’ প্রতিবাদে বরগুনার পুলিশ সুপার বিজয় বসাকসহ পাঁচ কর্মকর্তার অপসারণ দাবি করে মানববন্ধন ও কর্মবিরতি পালন করেছে জেলা আইনজীবী সমিতি।
আজ বুধবার সকালে জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় আইনজীবীরা পুলিশ হেফাজতে অ্যাডভোকেট মইনুল আহসান বিপ্লব তালুকদারকে নির্যাতনের নিন্দা জানিয়ে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ঘটনার সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্যদের অপসারণ দাবি করে তিন দিনব্যাপী প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
অন্যদিকে, এ ঘটনায় বরগুনার পুলিশ সুপার বিজয় বসাকসহ পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বুধবার বিকেলে আমতলী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী আইনজীবী মইনুল আহসান বিপ্লব তালুকদার। আদালতের বিচারক বৈজয়ন্ত বিশ্বাস অভিযোগ গ্রহণযোগ্যতার শুনানির জন্য আগামী ১১ মে দিন ধার্য করেন। এ অভিযোগে অন্য অভিযুক্তরা হলেন- বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম, আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পুলক চন্দ্র রায়, উপপরিদর্শক (এসআই) আরিফুর রহমান এবং সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. মনিরুল ইসলাম।
একই দিন বেলা ১টার দিকে জেলা আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জেলা আইনজীবী সমিতি। সাংবাদিক সম্মেলনে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুল মোতালেব ও সাধারণ সম্পাদক আক্তারুজ্জামান বাহাদুর জানান, তাঁদের সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনদিন কালোব্যাজ ধারণ, মানববন্ধন ও আধা ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করা হবে। এর মধ্যে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে আগামী ১০ মে সমিতির সভা আহ্বান করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে আইনজীবী মইনুল আহসান বিপ্লব তালুকদার জানান, আমতলী উপজেলার ঘটখালী এলাকায় গত রোববার রাতে তাঁর ভাই আহসান হাবিবের মোটরসাইকেলের সঙ্গে অন্য একটি মোটরসাইকেলের সংঘর্ষ হয়। এতে তাঁর ভাই আহত হলে তিনি তাঁর ভাইকে দেখতে যান। এ সময় একটি মোটরসাইকেলের চালক অপু রায় পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তিনি তাঁকে আটকানোর চেষ্টা করেন। এতে এসআই আরিফ ও কয়েকজন কনস্টেবল বাধা দেন। এ নিয়ে তাঁর সঙ্গে পুলিশের বগবিতণ্ডা হয়। পরে তাঁকে আটক করে আমতলী থানায় নেওয়া হয়। সেখানে তাঁকে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পুলক চন্দ্র রায় ও এসআই আরিফ দফায় দফায় তাঁর ওপর শারীরিক নির্যাতন চালান।
এদিকে, বরগুনার আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পুলক চন্দ্র রায় জানিয়েছেন, বরগুনার আমতলী উপজেলায় একটি মোটরসাইকেল দুঘর্টনাকে কেন্দ্র করে রোববার রাতে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আইনজীবী মইনুল আহসান বিপ্লব তালুকদার ও তাঁর লোকজন বরিশালের কয়েকজন সাংবাদিককে মারধর করেন। খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। এ সময় এসআই আরিফুর রহমান, কনস্টেবল শহীদুল ইসলাম ও নাসির উদ্দিনকেও তাঁরা মারধর করেন এবং একটি ওয়ারলেস সেট টেনে নিয়ে ভেঙে ফেলেন আইনজীবী মইনুল। একপর্যায়ে পুলিশের সাথে হামলাকারীদের সংঘর্ষে মইনুল ও তিনজন পুলিশ সদস্য আহত হন। এ ঘটনায় অ্যাডভোকেট মইনুলসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত রোববার রাতে একজন সহযোগীসহ একটি আঞ্চলিক পত্রিকার সাংবাদিক অপু রায় মোটরসাইকেলযোগে কুয়াকাটা থেকে বরিশাল যাচ্ছিলেন। পথে আমতলী উপজেলার ঘটখালী স্ট্যান্ডের কাছাকাছি এলে বিপরীতগামী একটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে সংঘর্ষ হলে অপুসহ অপর মোটরসাইকেলের দুই আরোহী রিপন ও আহসান হাবিব (আইনজীবী মইনুল আহসানের ভাই) আহত হন। স্থানীয়রা তাঁদের উদ্ধার করে আমতলী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন।
আহসান হাবিবের আহত হওয়ার খবর পেয়ে আইনজীবী মইনুল আহসান তালুকদার বিপ্লব ও তাঁর ভাই প্রিন্স তালুকদার, ইউসুফ তালুকদার, টেলিশন তালকুদার লোকজন নিয়ে হাসপাতাল গেটে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিক অপু রায়কে মারধর করেন। খবর পেয়ে আমতলী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের উদ্ধার করতে গেলে পুলিশের ওপরও চড়াও হন আইনজীবী মইনুল ও তাঁর লোকজন।
আহত আইনজীবী মইনুল বর্তমানে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
এ বিষয়ে বরগুনার পুলিশ সুপার বিজয় বসাক সাংবাদিকদের জানান, তিনি খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, থানায় নিয়ে কোনো ধরনের নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি। যা কিছু ঘটেছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যই ঘটেছে। তিনি আরো জানান, আইনজীবী মইনুলের বিরুদ্ধে এর আগেও ২০১২ সালে আমতলী থানায় পুলিশের ওপরে হামলার অভিযোগে অপর একটি মামলা রয়েছে।