মশা তাড়াতে ধোঁয়া, মায়ের সামনে শিশুর মৃত্যু
গোয়াল ঘরের মশা তাড়াতে সামান্য আগুন জ্বালিয়ে ধোঁয়ার সৃষ্টি করা হয়েছিল। ভুলে ওই আগুন আর নেভানো হয়নি। ওই আগুনে এক মায়ের চোখের সামনে পুড়ে মরল তাঁর দুই বছরের মেয়ে সুমাইয়া।
গতকাল শুক্রবার রাত ১২টার দিকে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার বেনেরপোতায় বসুন্ধরা গুচ্ছগ্রামে এই ঘটনা ঘটে। আগ্নিকাণ্ডে গোয়ালের একটি গরু ও তিনটি ছাগলও মারা গেছে।
আজ শনিবার সকালে বেনেরপোতায় বসুন্ধরা গুচ্ছগ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সুমাইয়াদের পোড়া বাড়ির সামনে লোকজনের ভিড়। কয়লা হয়ে পড়েছিল গবাদি পশুগুলো। সুমাইয়ার বাবা জেলে বাবর আলী নির্বাক হয়ে বসেছিলেন। তাঁকে ধরে বসেছিলেন এক স্বজন। সুমাইয়ার কথা বলে আহাজারি করছিলেন মা জ্যোৎস্না। বাড়ির পাশেই একটি জমিতে সুমাইয়াকে কবর দেওয়া হয়েছে।
বাবর আলী বলেন, তিনি মাছ ধরতে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় বিলে গিয়েছিলেন। ওই সময় মশা তাড়াতে গোয়ালঘরে মৃদু আগুন জ্বালিয়ে ধোঁয়ার সৃষ্টি করা হয়। তাঁর স্ত্রী শিশু দুই মেয়েকে নিয়ে বাঁশের বেড়া দেওয়া ঘরের বারান্দায় ঘুমিয়ে পড়েন। ভুলবশত গোয়ালঘরের আগুন না নেভানোয় গভীর রাতে তা ছড়িয়ে পড়ে। এতে তাঁর মেয়ে সুমাইয়া আগুনে পুড়ে মারা যায়। একই সময়ে গোয়ালে থাকা একটি গরু ও তিনটি ছাগল পুড়ে মারা যায়। এগুলোকে বাঁচাতে গিয়ে তাঁর স্ত্রী জ্যোৎস্না ও মেয়ে কুলসুম (৪) আহত হন। তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
কাঁদতে কাঁদতে জ্যোৎস্না বলেন, আগুন কীভাবে ছড়িয়ে পড়ে তিনি তা বুঝতে পারেননি। ঘুম ভাঙলে দেখতে পান তাঁর বারান্দায় আগুন ধরে গেছে। তাড়াতাড়ি উঠে তিনি ছোট মেয়ে মনে করে বড় মেয়েকে তুলেন। বড় মেয়ে মনে করে বালিশ টান দেন। তিনি মনে করেছেন, গায়ে হাত পড়লে বড় মেয়ে ঘুম থেকে উঠে পড়বে।
‘ছোট মাইয়া আর উঠতে পারল না। আমার সোনা পাখিরে আমি কেন থুইয়ে আসলাম।’ বলছিলেন জ্যোৎস্না।
খবর পেয়ে পাটকেলঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তরিকুল ইসলাম ঘটনাস্থলে যান। তিনি বলেন, এর আগেই স্থানীয়রা আগুন নিভিয়ে ফেলে।
তালার নগরঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মহব্বত আলী জানান, রাতে তিনি ঘটনাস্থলে গেছেন। তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত বাবর আলীকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে আজ শনিবার তিনি জরুরি সভা ডেকেছেন। তাঁদের হাতে টাকাসহ গৃহনির্মাণ সামগ্রী তুলে দেওয়া হবে।