ইসলামী আন্দোলনের প্রথম জয়
সারা দেশে চলছে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচন। আজ শনিবার হয় চতুর্থ দফার নির্বাচন। প্রতিবারই সবচেয়ে বেশি ইউপিতে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদসহ বিভিন্ন দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন।
তবে আজ লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ী ইউপি নির্বাচনে ঘটে ভিন্ন ঘটনা। ইউনিয়নটি আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিত থাকলেও সেখানে হানা দিয়েছে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। সেখানে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন দলটির প্রার্থী আলা উদ্দিন আলাল। তিনি ২১৮ ভোটে হারিয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আদিতমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ওই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান শওকত আলীকে।
এর মধ্য দিয়ে এবারের ইউপি নির্বাচনে এই প্রথমবারের মতো ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কোনো প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন।
ভোট গণনা শেষে দেখা গেছে, নৌকা প্রতীকের শওকত আলী পেয়েছেন চার হাজার ৪৫৯ ভোট। অন্যদিকে হাতপাখা প্রতীকের আলাল পেয়েছেন চার হাজার ৬৭৭ ভোট। নির্বাচনে বিএনপির মাইদুল ইসলাম জুয়েল, আওয়ামী লীগের লীগ বিদ্রোহী আশরাফুজ্জামান খান মোরশেদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মমতাজ উদ্দিনও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আলাল বর্তমানে ওই ইউনিয়নেরই ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
গত নির্বাচনে কমলাবাড়ী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়ে প্রথমবারের মতো ইউনিয়ন পরিষদে পা রাখেন আলাল। আর এবার ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয় পেলেন তিনি।
পেশায় ব্যবসায়ী আলাল ২০০২ সালে এসএসসি পাস করেন। গত নির্বাচনে ইউপি সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর বিভিন্ন সময় প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী নিজেই মাথায় বহন করে এলাকার মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিতরণ করতেন তিনি। সব সময়ই এলাকার মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করতেন।
ফলাফল ঘোষণার সময় আদিতমারী উপজেলা নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ কক্ষে অবস্থান করছিলেন আলাল। নির্বাচিত হওয়ার অনুভূতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা একটা অভূতপূর্ব ঘটনা যে আমরা ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে হারিয়ে জয়লাভ করলাম।’ নিজের ইউনিয়নকে একটি আদর্শ ইউনিয়ন হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করবেন বলেও সাংবাদিকদের জানান আলাল।
অন্যদিকে বর্তমান চেয়ারমান শওকত আলী এর আগে পরপর দুবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এর আগে তাঁর ভাই ও আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত শামসুল ইসলাম সুরুজ পরপর চারবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। ফলে দীর্ঘদিন ধরে কমলাবাড়ী ইউনিয়নটি আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে তাঁদেরই দখলে ছিল।
২০০৫ সালে দুর্বৃত্তদের হাতে শামসুল ইসলাম খুন হওয়ার পর তাঁর ভাই শওকত আলী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। আর এবারও তিনি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কমলাবাড়ী ইউনিয়ন এলাকায় চরমোনাই পীরের অনেক অনুসারী রয়েছেন। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও এর মনোনীত প্রার্থীর সঙ্গে সাধারণ মানুষের এক ধরনের বিচ্ছিন্নতাও তৈরি হয়। আর এসব কারণেই আজকের নির্বাচনে হাতপাখার কাছে নৌকার পরাজয় ঘটেছে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।