পরীক্ষার ফল এলো, থাকল না মোস্তাকিন
ফল প্রকাশের আগের দিন হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে মাকে বলেছিল ‘মা আগামীকাল আমার রেজাল্ট হবে, আমার জন্য দোয়া করিও।’ গত মঙ্গলবারের কথা। ওর নাম মোস্তাকিন।
গতকাল বুধবার যখন এসএসসির ফল প্রকাশিত হয় তখন মোস্তাকিনকে দেওয়া হচ্ছিল অক্সিজেন। পাশেই বসে থাকা মায়ের মুঠোফোনে চলে এসেছিল পরীক্ষার ফলাফল। অসুস্থ ছেলের কানে মা মনোয়ারা বলেন, ‘বাবা তুমি জিপিএ ৪ দশমিক ২৫ পেয়ে পাস করেছ।’ ভালো ফলাফল। এটা শুনে ছেলে সুস্থ হবে; মায়ের এটাই আশা।
প্রায় নিথর হয়ে যাওয়া মোস্তাকিনের প্রতিক্রিয়া জানতে পারেননি মা মনোয়ারা। মোস্তাকিন পাসের খবর জানতে পারল কি না তাও বোঝা যাওয়ার উপায় রইল না। কিছুক্ষণের মধ্যেই মোস্তাকিন (১৬) চলে যায় না ফেরার দেশে।
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা এসএস মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ভকেশনাল শাখায় এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় মোস্তাকিন। মোস্তাকিন ওই উপজেলার বাড়াইপাড়ার মতিয়ার রহমানের ছেলে।
গত সোমবার রাতে মোস্তাকিনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গতকাল বুধবার রাতে সেখানেই সে মারা যায়। আজ বৃহস্পতিবার পারিবারিক কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়।
মোস্তাকিনের স্বজনরা জানান, কয়েক দিন আগে হঠাৎ করেই প্রচণ্ড জ্বর আসে মোস্তাকিনের। প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। কিন্তু এতে উন্নতি না হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে গত সোমবার তাকে ভর্তি করা হয় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
পরিবার-স্বজন কিংবা শিক্ষক-সহপাঠী কেউই মেনে নিতে পারছে না মোস্তাকিনের এই অকাল মৃত্যু। বুধবার রাত থেকেই তার মা বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন আর বাবাও যেন পাগলপ্রায়। তার স্কুলসহ পুরো এলাকাতেও নেমেছে শোকের ছায়া।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কান্নাজড়িত কণ্ঠে মোস্তাকিনের মা মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘রেজাল্টের খবর শুনে অক্সিজেন দেওয়া অবস্থায় মোস্তাকিন আমার দিকে চোখ খুলে তাকায়। আর রাতে যখন অক্সিজেন নেওয়া বন্ধ হয়ে যায় তখন ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’ আর কথা বলতে পারছিলেন না মনোয়ারা।
মোস্তাকিনের বাবা মতিয়ার রহমান বলেন, ‘ছেলের ভালো ফলাফল শুনে মনে সাহস এসেছিল। ভেবেছিলাম এবার হয়তো সে সুস্থ হবে। কিন্তু সুস্থ হওয়া তো দূরের কথা সে একেবারেই আমাদের ছেড়ে চলে গেল।’
হাতীবান্ধা এসএস মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম জুয়েল বলেন, ‘মোস্তাকিন এসএসসিতে ৪ দশমিক ২৫ অর্জন করেছে। তবে তার এভাবে চলে যাওয়া আমাদের সবার জন্য অত্যন্ত কষ্টের খবর।’