নরসিংদীর দুই ইউপিতে ভোট দিয়েছেন প্রবাসী ও মৃতরাও!
নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার নিলক্ষা ও চর আড়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে মোট আটটি কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে। বাদ পড়েনি মৃত ও প্রবাসী নাগরিকরাও। এতে বিস্মিত হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। এসব কেন্দ্রে পুনরায় ভোট গ্রহণের দাবি জানিয়েছে বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
উভয় ইউনিয়নে গত ৭ মে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নিলক্ষা ইউপিতে জয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী তাজুল ইসলাম এবং চর আড়ালিয়ায় জয়ী হন আওয়ামী লীগের নুরুজ্জামান সরকার।
নিলক্ষা ইউনিয়নে চারটি কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়ার অভিযোগ করেন বিএনপির প্রার্থী আলী আজগর মোল্লা ও স্বতন্ত্র নির্বাচন করা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হক সরকার। উভয়ে জানান, হরিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দড়িগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নিলক্ষা শবদের আলী উচ্চ বিদ্যালয় ও গোপীনাথপুর ২ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শতভাগ ভোট পড়ার ঘটনা ঘটে।
নিলক্ষা ইউপি এলাকা ঘুরে জানা যায়, হরিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল হক সরকার পেয়েছেন দুটি ভোট আর বিএনপি প্রার্থী আলী আজগর মোল্লা পেয়েছেন চারটি ভোট এবং আওয়ামী লীগের তাজুল ইসলাম পেয়েছেন এক হাজার ৩৭৩ ভোট।
দড়িগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আবদুল হক সরকার পেয়েছেন ৩৭ ভোট আর বিএনপি প্রার্থী আলী আজগর মোল্লা পেয়েছেন সাতটি ভোট। ওই কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের তাজুল ইসলাম পেয়েছেন এক হাজার ৮২৯ ভোট।
গোপীনাথপুর ২ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আবদুল হক সরকার পেয়েছেন ৪৪ ভোট আর বিএনপির প্রার্থী আলী আজগর মোল্লা পেয়েছেন ১৮ ভোট এবং আওয়ামী লীগের তাজুল ইসলাম পেয়েছেন এক হাজার ৬১১ ভোট।
শবদের আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে আবদুল হক সরকার পেয়েছেন ১৫টি ভোট আর বিএনপি প্রার্থী আলী আজগর মোল্লা পেয়েছেন ছয় ভোট এবং তাজুল ইসলাম পেয়েছেন এক হাজার ১৫৭ ভোট।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ভোটারদের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন ৯৮ জন এবং বিদেশে আছেন প্রায় ৫০০ ভোটার। স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল হক দাবি করেন, বহু ভোটার অসুস্থতার কারণে ভোট দিতে যাননি।
স্থানীয় নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নিলক্ষা ইউনিয়নের শবদের আলী বিদ্যালয়ে ৩০০ ব্যালট পেপার (তিনটি বই) বাতিল করা হয়। দড়িগাঁও বিদ্যালয়ে বাতিল হয় ১২৬টি ব্যালট। গোপীনাথপুরে বাতিল হয় ৪০টি ব্যালট পেপার।
চর আড়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদে বিএনপির প্রার্থী মোহাম্মদ হাসান আমান অভিযোগ করেন, বাতাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বটতুলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খামারপাড়া মাদ্রাসা কেন্দ্র ও বটতুলি খামার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শতভাগ ভোট পড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নির্বাচনের দিন ওই ওয়ার্ডে প্রায় ৬০-৭০ জনের বেশি ভোটার ভোট দিতে কেন্দ্রে যাননি। ওই ওয়ার্ডের ভোটারদের অর্ধশতাধিক থাকেন বিদেশে। ১০ জন ভোটার সম্প্রতি মারা যান।
বিএনপির প্রার্থী হাসান আমানের বড় ভাই গোলাম মাওলা বলেন, ‘আমি হৃদরোগে আক্রান্ত। তাই ভোটকেন্দ্রে যেতে পারিনি। আমার অন্য ভাই ও আমার দুই ছেলেই এ এলাকার ভোটার কিন্তু বর্তমানে তারা প্রবাসী।’
স্থানীয় নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বটতুলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের মোট ভোটার এক হাজার ৯০ জন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এক হাজার ৭৩ ও বিএনপির প্রার্থী তিন, স্বতন্ত্র প্রার্থী চার ভোট পান। ১০টি ভোট বাতিল হয়েছে। ওই কেন্দ্রেও অন্তত ১৬৯ জন ভোটার অনুপস্থিত ছিলেন।
খামারপাড়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে মোট ভোটার ৯২১ জন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ৮৯৩ ভোট পান। বাতিল হয়েছে সাতটি ভোট। বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কেউ ভোট পাননি। ওই কেন্দ্রেও প্রায় ১০৯ জন ভোটার অনুপস্থিত ছিলেন।
বটতুলি খামার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের মোট ভোটার ৯৭৪ জন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ৯৫৯ ভোট পান। বাতিল হয়েছে ১৪ ভোট। বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কেউ ভোট পাননি। ওই কেন্দ্রেও প্রায় ৪০ জন অনুপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে ৩৯ জন থাকেন বিদেশে। একজন মৃত।
বিএনপির প্রার্থী মোহাম্মদ হাসান আমান বলেন, ‘ভোট মেরে ফেলতে পারে, এমন শঙ্কায় তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত বিভিন্ন সময় নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে প্রয়োজনীয় প্রমাণসহ লিখিত অভিযোগ দেই। তারা কোনো প্রতিকারে ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। এখন শতভাগ ভোট পড়া চার কেন্দ্রে পুনরায় ভোট গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।’
আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও নির্বাচিত চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান সরকার বলেন, ‘আমার এলাকায় নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। সকাল থেকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট প্রদান করেছে। এখানে কোনো কেন্দ্রেই কোনো বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেনি।’
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা আহাম্মদ আলী বলেন, ‘শতভাগ ভোট পড়ার বিষয়টিকে অসংগতিপূর্ণ মনে হয়েছে। এ বিষয়ে প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।’