নরসিংদীতে টেক্সটাইলে আগুন, বিদেশিসহ নিহত ৩
নরসিংদীর শীলমান্দিতে পাকিজা গ্রুপের মম টেক্সটাইল কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে এক পাকিস্তানি নাগরিকসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত আটজন।
আজ শনিবার সকাল ৭টার দিকে কারখানার কেমিকেলের গুদাম থেকে এই অগ্নিকাণ্ডের সূচনা হয়। পরে তা কারখানায় ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ঢাকা, নরসিংদী, মাধবদী ও পলাশ ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিট আড়াই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন কারখানার প্রসেসিং ইউনিটের টেকনিশিয়ান পাকিস্তানের করাচির নাগরিক আশিক আলী (৪০) এবং কারখানার দুই ডিজাইনার চুয়াডাঙ্গার রমজান মিয়া (৪০) ও মজিবুর মিয়া (৩৫)।
ফায়ার সার্ভিস ও কারখানা সূত্রে জানা যায়, মম টেক্সে প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় কেমিকেলের গুদামে সকাল ৭টার দিকে হঠাৎ আগুন লাগে। কিছু বোঝার আগেই আগুনের লেলিহান শিখা পুরো ফ্লোরে ছড়িয়ে পড়ে। এতে সাততলা ভবনের ওপরে আগুনের ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়লে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিষয়টি টের পান। কিন্তু বের হওয়ার অন্য কোনো পথ না থাকায় তাঁরা ওপরে আটকা পড়েন। ওপর থেকে আতঙ্কিত লোকজন বের হওয়ার চেষ্টা করলে কেমিকেলের গ্যাস ও ধোঁয়ায় তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়েন।
খবর পেয়ে নরসিংদী, মাধবদী ও পলাশ ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়। পরে ঢাকা থেকে আরো তিনটি ইউনিট এসে আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেয়। ফায়ার সার্ভিসের ৩০ জন কর্মী প্রায় আড়াই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত ভবন থেকে ১১ জনকে উদ্ধার করে নরসিংদী জেলা ও সদর হাসপাতালে পাঠায়। এদের মধ্যে নরসিংদী সদর হাসপাতালের চিকিৎসকরা প্রসেসিং ইউনিটের টেকনিশিয়ান পাকিস্তানের করাচির আশিক আলী ও ডিজাইনার রমজান মিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন। অপরদিকে জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকরা ডিজাইনার সেলিম মিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন। বাকিদের চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মম টেক্সের কারখানায় একাধিক ইউনিট রয়েছে। ইউনিট ১-এর নিচতলায় কেমিকেলের গুদাম, ওপরে প্রশাসনিক কার্যালয়। আগুনে নিচের সব কেমিকেল পুড়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পানি দিয়ে আগুন নেভাচ্ছেন। এতে কেমিকেল পুরো নিচতলা থেকে রাস্তায়ও ছড়িয়ে পড়েছে।
কারখানার ব্যবস্থাপক (উৎপাদন) আর টি ইয়াদব বলেন, সকাল ৬টায় কারখানার শিফট পরিবর্তন হয়। এতে একদল শ্রমিক কারখানা থেকে বেরিয়ে যান, আরেক দল প্রবেশ করেন। হঠাৎ করেই নিচতলায় আগুন দেখতে পান শ্রমিকরা। কিন্তু আগুনের তীব্রতা এতই বেশি ছিল যে ওপরে অবস্থান করা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বের হতে পারেননি। উল্টো যাঁরা বের হওয়ার চেষ্টা করেছেন, তাঁরা কেমিকেলের গ্যাস ও ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়েছেন। এঁদের মধ্যে একজন বিদেশি টেকনিশিয়ানসহ তিনজন মারা গেছেন।
নরসিংদী ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমাদের ধারণা, কেমিকেলের বিকিরণ থেকে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। তবে অন্য কোনো কারণ থেকে এই দুর্ঘটনা ঘটলে তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে। আগুন নেভাতে গিয়ে আহত ফায়ার সার্ভিসের কর্মী মাজহারুল ইসলামকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’
নরসিংদী সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা বলেন, নিহতদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনায় কারখানা কর্তৃপক্ষের কোনো অবহেলা রয়েছে কি না তা খটিতে দেখা হচ্ছে। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মম টেক্সের মহাব্যবস্থাপক বুলবুল আহমেদ বলেন, অগ্নিকাণ্ডে প্রায় দুই কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। নিহত বিদেশি নাগরিকের মৃতদেহ ময়নাতদন্ত শেষে হিমঘরে রাখা হয়েছে। দূতাবাসের মাধ্যমে তাঁকে দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নিহতদের স্বজনদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হবে।