বরগুনায় শিশু রবিউল হত্যায় মিরাজের মৃত্যুদণ্ড
বরগুনার তালতলী উপজেলার সোনাকাটা ইউনিয়নের ছোট আমখোলা গ্রামের শিশু রবিউলকে (১০) পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় একমাত্র আসামি মিরাজকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত।
আজ মঙ্গলবার বরগুনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আবু তাহের এ আদেশ দেন।
এর আগে গত ২৬ মে এ বিষয়ে রায়ের দিন ধার্য ছিল। তবে সেদিন বরগুনায় বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে রায় প্রস্তুত করা যায়নি। এ জন্য রায়ের দিন পিছিয়ে আজ মঙ্গলবার করা হয়েছিল।
হত্যার দায়ে মিরাজের মৃত্যুদণ্ডাদেশে সন্তোষ প্রকাশ করেন রবিউলের বাবা-মাসহ এলাকাবাসী। সকাল সাড়ে ৮টা থেকেই তাঁরা বরগুনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জড়ো হতে থাকেন।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও বরগুনার অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) আক্তারুজ্জমান বাহাদুর বলেন, ‘বিজ্ঞ আদালত প্রমাণের ভিত্তিতে এ রায় দিয়েছেন। রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। উচ্চ আদালতেও এই রায় বহাল থাকবে বলে আমরা আশাবাদ ব্যক্ত করছি।’
রায়ে ৩০১ ও ৩০২ ধারায় মিরাজকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে তাঁকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এই জরিমানার টাকা মিরাজের মা-বাবা, ভাই-বোন এবং নানির স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি থেকে আদায় করে বরিউলের বাবাকে দিতে বলা হয়েছে।
রায় উপলক্ষে সকাল ৯টার দিকে জেলা কারাগার থেকে আদালতে আনা হয় মামলার একমাত্র আসামি মিরাজকে। মিরাজের উপস্থিতিতেই রায় পাঠ করে শোনানো হয়।
রায়ের বিষয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, প্রমাণের ভিত্তিতে এ রায় হয়নি। সাক্ষীরা সবাই শুনে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আবেগতাড়িত হয়ে এ রায় দেওয়া হয়েছে। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, এ মামলায় রবিউলের বাবা-মা ও পুলিশ, চিকিৎসক এবং সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানসহ মোট ২৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। মামলার বাদী-বিবাদীপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পর মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন করে বরগুনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আবু তাহের রায়ের দিন ধার্য করেন।
গত বছরের ৩ আগস্ট রাতে পেতে রাখা জালের মাছ চুরির অভিযোগে বরগুনার তালতলী উপজেলার সোনাকাটা ইউনিয়নের ছোট আমখোলা গ্রামের শিশু রবিউলকে (১০) নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যার পর তার লাশ পাশের খালে ফেলে রাখেন মিরাজ। পরের দিন ৪ আগস্ট বিকেলে স্থানীয় লকরার খালে রবিউলের লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন স্থানীয় লোকজন।
ওই দিনই রবিউলের লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায় পুলিশ। এ ঘটনায় ৫ আগস্ট শিশু রবিউলের বাবা দুলাল মৃধা বাদী হয়ে তালতলী থানায় মিরাজকে প্রধান আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
মামলা দায়েরের দিনই মিরাজকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর ৬ আগস্ট বৃহস্পতিবার বরগুনার আমতলী উপজেলার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম বৈজয়ন্ত বিশ্বাসের আদালতে হাজির করা হয়। মিরাজ ১৬৪ ধারায় রবিউলকে হত্যার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে ২৩ আগস্ট মিরাজকে একমাত্র আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ।
রবিউল আউয়াল স্থানীয় ফরাজিবাড়ী দাখিল মাদ্রাসায় চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত। রবিউলের বড় বোন খাদিজা দশম শ্রেণির ছাত্রী। ছোট বোন জান্নাতি সবে হাঁটতে শিখেছে। তালতলীর ফকিরহাট বাজারে রবিউলের বাবা দুলাল মৃধার খুচরা যন্ত্রাংশের একটি ছোট্ট দোকান রয়েছে। ওই দোকানের আয় দিয়েই চলে রবিউলদের সংসার।