কথা ছিল, তবু কথা হলো না
পূর্ব নির্ধারিত থাকলেও শেষ পর্যন্ত ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের দেখা না পেয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে ছিটমহলবাসী। আজ মঙ্গলবার দুপুরে দুই দেশের সীমান্তে আলোচিত দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ছিটমহলের প্রবেশদ্বার তিনবিঘা করিডর পরিদর্শনে যান রাজনাথ।
ছিটমহল বিনিময় নিয়ে সেখানকার অধিবাসীদের পক্ষে ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলের সাথে মন্ত্রী কথা বলবেন বলেও ঠিক করেছিল সে দেশের প্রশাসন ও সীমান্ত রক্ষী বাহিনী-বিএসএফ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। ফলে চুক্তির বাস্তবায়ন নিয়ে আবারও শঙ্কা বাড়ল দুই দেশের ছিটমহলবাসীর।
তবে রাজনাথ সিং ছিটমহল বিনিময় নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় জানান, এটা একটা দীর্ঘদিনের সমস্যা। তবে এটা নিয়ে কাজ চলছে। তিনি নিশ্চিত যে, তাঁরা সফল হবেন। সীমান্তে মানুষ হত্যার ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি, অবশ্যই সীমান্ত হত্যা বন্ধ হবে।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে আজ ভোর থেকেই পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি জেলার অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশি ৫১টি ছিটমহলের পাঁচ শতাধিক বাসিন্দা বালুপুকুরি ছিটমহলে জড়ো হয়।
এর পাশাপাশি নিজেদের কষ্ট ও দাবির কথা জানাতে বাংলাদেশের লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী ও পঞ্চগড় জেলার অভ্যন্তরে থাকা ভারতীয় ছিটমহলেরও অনেক বাসিন্দা গিয়েছিল তিনবিঘা করিডর এলাকায়।
কথা ছিল, বালুপুকুরি ছিটমহলের ৩০ মিটার দূরে রাজনাথ সিংয়ের সাথে ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির ভারতীয় অংশের সহসম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্তের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বৈঠক করবেন। কিন্তু পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী বালুপুকুরি ছিটমহলে পাশে চলা রাজনাথের জনসভাস্থলে প্রতিনিধি দলটিকে নিরাপত্তা তল্লাশি শেষে অপেক্ষায় রাখে বিএসএফ। পরে তাদের আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কাছে নিয়ে যাওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করে ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি।
এ ঘটনার প্রতিবাদে বালুপুকুরি ছিটমহলে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ সভা করে ভারতের অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশি ছিটমহলবাসী। অন্যদিকে বাংলাদেশের পানবাড়ি এলাকায় বিক্ষোভ করে ভারতীয় ছিটমহলের অধিবাসীরা।
ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির ভারতীয় অংশের নেতা দীপ্তিমান সেনগুপ্ত এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘অপেক্ষার সময় বিএসএফ আমাদের কাছে থাকা স্মারকলিপি নিয়ে যায়। আর যাওয়ার সময় তাঁরা বলে যায়, উনি (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) আমাদের সাথে দেখা করবেন না। প্রকারান্তরে রাজনাথ আমাদের অপমান করেছেন।’ বিষয়টির ব্যাখা চেয়ে তিন দিনের মধ্যে ছিটমহলবাসীর পক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির বাংলাদেশ অংশের লালমনিরহাট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ভারতীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঠিক করা কর্মসূচি শেষ পর্যন্ত বাতিল করায় ছিটমহল বিনিময় নিয়ে আমাদের শঙ্কা বেড়ে গেল।’
রাজনাথ সিং ছিটমহল সফরের সময় বিএসএফের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। পরে করিডরের এ পাশে থাকা বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড-বিজিবির চেকপোস্ট পরিদর্শন করেন তিনি। এ সময় বিজিবির পক্ষ থেকে তাঁকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। বিকেলে তিনি সফর শেষে ফিরে যান।
এদিকে ভারতের একটি বাংলা দৈনিকে গতকাল সোমবার প্রকাশিত খবরে বলা হয়, তিনবিঘা করিডর পরিদর্শনের পাশাপাশি ছিটমহল বিনিময়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দাবি মতো ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের আর্থিক প্যাকেজের যৌক্তিকতা বিষয়ে ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সরেজমিন খোঁজ-খবর নিতে এ সফর করেন।