মামলা থেকে মুক্তি চান জামাল
ভারতের দিল্লিতে নিজ বাসায় মা ও বাবার কাছে ফিরেছে অভিরূপ সনু (১১)। ব্যাপারটি জেনে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন জামাল বিন মুছা। আনন্দে জামালের চোখ দিয়ে ঝরেছে কেবলই অশ্রু। ঝরবেই বা না কেন? ২০১০ সালে পাচারকারীদের হাত থেকে সনুকে উদ্ধার করেন জামাল। পাচারের শিকার হয়ে দিল্লির সনু চলে আসে বাংলাদেশের বরগুনায়।
আজ শনিবার এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় জামাল বিন মুছার। জামাল বলেন, ‘একদিকে যখন ভাবি শত বাধা ডিঙিয়ে সনুকে তার বাবা-মায়ের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি তখন আনন্দে চোখে জল এসে যায়। কিন্তু আবার যখন দেখি একের পর এক মিথ্যা মামলার জালে আটকে আছি, তখন আমি ও আমার পরিবার চোখে শর্ষে ফুল দেখি।’
মুছা বলেন, সনুকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিতে সেই ২০১০ সাল থেকে লড়তে হয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী এক পাচারকারী চক্রের সঙ্গে। তিনি আরো বলেন, ‘একমাত্র ছেলেকে বিদেশ পাঠানোর জন্য সঞ্চিত যেটুকু অর্থ ছিল তার সবই শেষ। এখন হাঁস-মুরগি বিক্রি করে ভাড়ার টাকা জোগাড় করে সাক্ষীসহ পরিবারের সবাইকে নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই তাঁকে একাধিক মামলায় হাজিরা দিতে বিভিন্ন আদালতে যেতে হয়। কবে তিনি এসব মামলার জাল ছিঁড়ে বের হতে পারবেন তা তিনি জানেন না।
জামাল বিন মুছার স্ত্রী নিরু বেগম জানান, সনুকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিতে তাঁদের পরিবারের সবাইকে কত যে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে, তা বলে বোঝানো যাবে না। তিনি বলেন, পাচারকারী চক্রের দায়ের করা পাঁচটি মামলায় একমাত্র ছেলে ফেরদৌসসহ পরিবারের সবাইকে একাধিকবার জেল খাটতে হয়েছে।
শিশু সনুকে ভারত থেকে অপহরণ করে পাচার করে আনা পাচারকারী চক্রের নাম-পরিচয় এখন ওপেন সিক্রেট। ভারত থেকে শুধু সনুকে নয়, ভয়ঙ্কর ওই পাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ থেকে একাধিক নারী ও শিশুকে ভারতে পাচারের অভিযোগ রয়েছে। তারপরও এখন অবধি পাচারকারী চক্রের কাউকেই গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। বরগুনার বেতাগী উপজেলার গেরামর্দন গ্রামের বাসিন্দা পরি বানু (৪৫) বলেন, ‘তার ছেলে হাসিবকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে একই গ্রামের হাসি বেগম (৪০) আজ থেকে চার বছর আগে ভারত নিয়ে যান। সেই থেকে আর কোনো খবর নেই তাঁর ছেলের। একই গ্রামের জুয়েল মিয়া (৩৫) জানান, হাসি বেগম ও তাঁর ছয় বোনের সবাই পাচারকারী চক্রের সদস্য। তাঁরা সবাই ভারতে যাওয়া-আসা করেন। সেখানে তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে ডলার ব্যবসাসহ নানা রকমের প্রতরণামূলক ব্যবসা চালিয়ে আসছেন বলে তিনি জানান। অভিযুক্ত হাসি বেগমের ছোট বোন রহিমার সাবেক স্বামী মিরাজ (৩০) বলেন, রহিমা বেগম তাঁর সঙ্গে প্রতারণা করে ব্যবসার কথা বলে তাঁকে ভারত নিয়ে যায়। পরে ভারত নিয়ে রহিমাকে বিয়ে করতে তাঁকে বাধ্য করা হয়। বিয়ের পর তাঁকে (মিরাজকে) বিভিন্ন প্রতারণামূলক ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে বাধ্য করেন রহিমা ও তাঁর সহযোগীরা। মিরাজ আরো জানান, পরে নানা রকম কৌশল করে ভারত থেকে তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন।
এত অভিযোগের পরেও বরগুনার বেতাগী উপজেলার প্রত্যন্ত গেরামর্দন গ্রামে ওই পাচারকারী চক্রের কাউকেই এখনো পর্যন্ত গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এ বিষয়ে কথা হয় বরগুনার পুলিশ সুপার বিজয় বসাকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘শিশু সনুর ঘটনার মধ্য দিয়ে বোঝা যায় যে বেতাগী উপজেলার গেরামর্দন গ্রামে একটি পাচারকারী চক্র রয়েছে।’ এ বিষয়ে যথাযথ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।