পাথর ফেলতে এসে হারালেন কিডনি
দিনাজপুরে পেটের পাথর অস্ত্রোপচার করতে এসেছিলেন এক নারী। অস্ত্রোপচারের পর জানতে পেরেছেন, একটি কিডনি কেটে ফেলেছেন চিকিৎসক। চিকিৎসক নিজেই তা ওই নারীর কাছে স্বীকার করেছেন এবং পরে নিজেদের খরচে করেছেন পাথর অপসারণের অস্ত্রোপচার। কিন্তু নিজের কিডনি হারানো নিয়ে এখন দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ওই নারী।
দিনাজপুর শহরের কালীতলা থানার মোড়সংলগ্ন এইচ কে মাদার কেয়ার হসপিটালে এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত চিকিৎসক হজরত আলী ওই প্রতিষ্ঠানেরই চেয়ারম্যান। এ ঘটনায় ওই চিকিৎসকের বিচার চাইছেন রোগীর স্বজনরা।
হাসপাতাল ও রোগীর আত্মীয়স্বজনদের সূত্রে জানা যায়, দিনাজপুরের বিরল উপজেলার পাকুড়া গ্রামের আবদুল কুদ্দুসের স্ত্রী আনোয়ারার বাঁ পাশের কিডনির ওপরে একটি পাথর হয়। এ ছাড়া কিডনিতে কোনো সমস্যা ছিল না। এর প্রমাণ হিসেবে এক্সরে প্রতিবেদনও আছে তাঁদের কাছে।
গত ২৯ জুন আনোয়ারা ভর্তি হন এইচ কে মাদার কেয়ার হসপিটালে। পরের দিন ৩০ জুন হজরত আলী নিজেই অস্ত্রোপচার করেন। আনোয়ারার ছেলে আইনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা জানতে পারি পাথর অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে ওই চিকিৎসক মায়ের অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে ভুল করে একটি কিডনি কেটে ফেলে। পাথর ও কিডনি দুটোই কেটে ফেললেও ডা. হজরত আলী কিডনি কেটে ফেলার বিষয়টি তাদের জানাননি। পরের দিন বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়। হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে আইনুল বিষয়টি জানতে পারেন।
আনোয়ারার ভাই রইসউদ্দিন জানান, কিডনি কেটে ফেলার বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর চিকিৎসক হজরত আলীর কাছে তাঁরা যান। পরে তিনি স্বীকার করেন আনোয়ারার কিডনি কাটা পড়ে গেছে। তখন এক লাখ টাকার বিনিময়ে বিষয়টি মীমাংসা করতে চান হজরত আলী। এমনকি পাথর অস্ত্রোপচারের ব্যয়ও না নেওয়ার কথা জানান। রইসউদ্দিন আরো জানান, বিভিন্ন স্থানে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন ওই চিকিৎসক।
গত শুক্রবার রাতে বিষয়টি জানতে পারেন সাংবাদিকরা। তবে হজরত আলী সাংবাদিকদের এড়িয়ে যান। তিনি এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। হাসপাতালের পঞ্চম তলায় ভর্তি থাকা রোগী আনোয়ারা বলেন, ‘আমি ভর্তি হয়েছি পাথর অপারেশন করার জন্য। অথচ এখন শুনছি যে আমার একটি কিডনি কেটে ফেলেছে। আমাকে এখন একটি কিডনি নিয়ে চলতে হবে।’
এদিকে দিনাজপুরের সিভিল সার্জন ড. অমলেন্দু ছুটিতে থাকায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
জানা যায়, এর আগে একটি অবৈধ গর্ভপাত মামলায় হজরত আলীর নয় বছরের সাজা হয় এবং এক বছর সাজা খেটে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হন।