পাবনায় হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী ‘চড়ক পূজা’
পাবনার চাটমোহরে বড়াল নদীর তীরে হিন্দু সম্প্রদায়ের চার দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী বোঁথড় ও চড়ক মেলা শেষ হয়েছে আজ বুধবার। গত রোববার বোঁথড় গ্রামে শুরু হয় হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী চড়ক পূজা ও মেলা। চড়ক পূজা ও মেলাকে কেন্দ্র করে শুধু চাটমোহর নয়, চলনবিল অঞ্চলের মানুষের মাঝে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।
হিন্দু সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে হাজার বছর ধরে চলে আসা এই চড়ক মেলা এখন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে পূজা অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে উদযাপন কমিটি ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে সব ধরনের ব্যবস্থা।
চৈত্রসংক্রান্তির আগের দিন একসময়ের খরস্রোতা কিন্তু বর্তমানে মৃত বড়াল নদীর তীরবর্তী বোঁথড় গ্রামটি হয়ে ওঠে তীর্থক্ষেত্রের কেন্দ্রবিন্দু। শুধু এপার বাংলা নয়, ওপার বাংলা থেকেও ভক্ত-পুণ্যার্থীরা আসেন এই চড়ক পূজা ও মেলায়। পাট ঠাকুরের পাটে ধূপ দেওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয় চড়ক পূজার আনুষ্ঠানিকতা। সোমবার চড়ক গাছ দিঘীর পানি থেকে তোলার পর মনোবাসনা পূরণের আশায় গাছে তেল, দুধ, চিনি, মাখন ঢালেন ভক্ত-অনুসারীরা। এ ছাড়া আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে ভরন চালান, কালী নাচ, পাঁঠা বলিসহ আনুষঙ্গিক পূজা-অর্চনা চলে। রাতে চলে ফুল ভাঙা ও হাজরা ছাড়া। মঙ্গলবার চৈত্রসংক্রান্তির তিথিতে চড়কগাছ ঘোরানো হয়। আজ মহাদেব প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এই পূজা ও মেলা।
পূজার প্রধান পুরোহিত সৌরেশ চক্রবর্তী জানান, প্রায় ১৩ হাত দৈর্ঘ্যের শালগাছটি চড়কগাছ নামে পরিচিত। বান রাজার আমল থেকে এখানে চড়ক মেলা চলে আসছে।
ভক্ত-দর্শনার্থীরা যেন সুষ্ঠুভাবে নির্বিঘ্নে পূজা সম্পন্ন করে ফিরে যেতে পারেন তার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে উপজেলা প্রশাসন ও পূজা উদযাপন কমিটি।
অভাব, দরিদ্রতা আর পশ্চাৎপদ বিলপারের গ্রামীণ মানুষের একঘেঁয়ে নিরানন্দ জীবনে সাময়িকভাবে হলেও কিছুটা বৈচিত্র্যের স্বাদ নিয়ে আসে এই মেলা। তাই এই মেলার সমাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে এখানকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন অপেক্ষায় থাকেন আরেকটি নতুন বছরের।