চিত্রশিল্পী সুলতানের ৯২তম জন্মবার্ষিকী পালিত
প্রচণ্ড বৃষ্টি আর ঝড় উপেক্ষা করে নড়াইলে বিশ্ব বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের ৯২তম জন্মবার্ষিকী পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে এস এম সুলতান ফাউন্ডেশন ও জেলা প্রশাসনের আয়োজনে আজ বুধবার সকাল ৮টায় প্রয়াত শিল্পীর সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলির মধ্য দিয়ে শুরু হয় দিবসের কর্মসূচি ।
সকাল ৯টায় সুলতানের সমাধি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় প্রায় তিন শতাধিক শিশু অংগ্রহণ করে।
আয়োজকরা জানান, এস এম সুলতানের ৯২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী ০১ সেপ্টেম্বর চিত্রা নদীতে নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হবে।
বিশ্ব বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান ( লাল মিয়া ) ১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট নড়াইলের মাছিমদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম মেছের আলী আর মা মাজু বিবি।
রাজমিস্ত্রি বাবার সংসারে দরিদ্রতার মাঝেও ১৯২৮ সালে নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুলে লেখাপড়া শুরু করেন শেখ মোহাম্মদ সুলতান। স্কুলের অবসরে বাবাকে কাজে সহযোগিতার করার সময় ছবি আঁকতে শুরু করেন।
এ সময় তার আঁকা ছবি স্থানীয় জমিদারদের দৃষ্টি আর্কষণ করে। রাজনীতিবিদ ও জমিদার শ্যামাপ্রাসাদ মুখোপাধ্যায় ১৯৩৩ সালে নড়াইলের জমিদার ব্যারিস্টার ধীরেন রায়ের আমন্ত্রণে ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুল পরিদর্শনে গেলে তাঁর একটি ছবি আঁকেন পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র এস এম সুলতান। ছবি দেখে মুগ্ধ হন শ্যামাপ্রাসাদসহ অন্যরা। লেখাপড়া ছেড়ে ১৯৩৮ সালে কলকাতায় গিয়ে ছবি আঁকা ও জীবিকা নির্বাহ শুরু করেন।
ওই সময় চিত্র সমালোচক শাহেদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে সুলতানের পরিচয় হয়। সোহরাওয়ার্দীর সুপারিশে অ্যাকাডেমিক কোনো যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও ১৯৪১ সালে কলকাতা আর্ট স্কুলে ভর্তির সুযোগ পান। পরে আর্ট স্কুল ত্যাগ করে ঘুরে বেড়ান এখানে-সেখানে।
এ সময় কাশ্মীরের পাহাড়ের বাসিন্দাদের সঙ্গে বসবাস এবং জীবন-জীবিকা নিয়ে ছবি আঁকা শুরু করেন। ভারতের সিমলায় তার প্রথম একক চিত্র প্রদর্শনী হয়। ১৯৪৮ সালে লাহোরে আয়োজিত সুলতানের চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর বোন ফাতিমা জিন্নাহ। ১৯৫০ সালে চিত্রশিল্পীদের আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে পাকিস্তান সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে যোগদানের জন্য সুলতান আমেরিকা যান।
এরপর ইউরোপের বেশ কয়েকটি একক ও যৌথ প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেন সুলতান। পাবলো পিকাসো, সালভেদর দালি, পল ক্লি প্রমুখ খ্যাতিমান শিল্পীর ছবির পাশে সুলতানই এশিয়ার একমাত্র শিল্পী যার ছবি এসব প্রদর্শনীতে সুযোগ লাভ করে। ১৯৫৩ সালে নড়াইলে ফিরে আসেন সুলতান। শিশু-কিশোরদের সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি চারুকলা শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। ১৯৬৯ সালের ১০ জুলাই দি ইনস্টিটিউট অব ফাইন আর্ট প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৭ সালে স্থাপিত হয় শিশুস্বর্গ।
সুলতান নিজের সঞ্চিত অর্থ দিয়ে ১৯৯২ সালে ৯ লাখ মতান্তরে ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৫ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট দ্বিতলা নৌকা (ভ্রাম্যমাণ শিশুস্বর্গ) নির্মাণ করিয়েছিলেন। চিত্রাংকনের পাশাপাশি বাঁশি বাজাতে পারতেন। পুষতেন সাপসহ বিভিন্ন পশু-পাখি।
শিল্পের মূল্যায়ন হিসেবে সুলতান পেয়েছেন ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যান অব দ্য ইয়ার, নিউইয়র্কের বায়োগ্রাফিক্যাল সেন্টার থেকে ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট এবং এশিয়া উইক পত্রিকা থেকে ম্যান অব এশিয়া পুরস্কার।
এ ছাড়া ১৯৮২ সালে একুশে পদক এবং ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন। ১৯৮৪ সালে সুলতান লাভ করেন বাংলাদেশ সরকারের রেসিডেন্ট আর্টিস্ট স্বীকৃতি এবং ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ সম্মাননা।
১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর অসুস্থ অবস্থায় যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সুলতান। পরে প্রিয় জন্মভূমি নড়াইলের কুড়িগ্রামে সুলতানকে শায়িত করা হয়।