কালের কণ্ঠের সম্পাদকসহ ছয়জনের নামে সমন
সাংবাদিকের দায়ের করা মামলায় দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক, প্রকাশকসহ ছয়জনের নামে সমন জারি করেছেন ঠাকুরগাঁওয়ের একটি আদালত। গতকাল বুধবার ঠাকুরগাঁও যুগ্ম জেলা জজ-১-এর বিচারক তারিকুল ইসলাম এ আদেশ দেন।
যাঁদের বিরুদ্ধে সমন জারি করা হয়েছে, তাঁরা হলেন কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, প্রকাশক ময়নাল হোসেন চৌধুরী, উপদেষ্টা সম্পাদক অমিত হাবিব, বার্তা সম্পাদক চৌধুরী আফতাবুল ইসলাম, ন্যাশনাল ডেস্কের শিফট ইনচার্জ খায়রুল বাশার শামীম ও ভারপ্রাপ্ত মফস্বল সম্পাদক মো. রুবেল।
বাদীপক্ষের আইনজীবী সিরাজুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বিষয়টি জানিয়েছেন। মামলায় তাঁকে সহযোগিতা করেন ঠাকুরগাঁও আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহিম, আইনজীবী এন্তাজুল হক, জাকির হোসেন, জয়নাল আবেদীন ও ইব্রাহিম আলী।
মামলার বিবরণ সূত্রে জানা যায়, গত ২০ জানুয়ারি কালের কণ্ঠের নিজস্ব প্রতিবেদক আলী আহসান হাবিবকে সংবাদপত্রের অষ্টম মজুরি বোর্ডের প্রণীত আইন, প্রেস কাউন্সিল আইন, শ্রম আইন ২০০৬ ও ২০১৩ এবং সাংবাদিকতা চাকরি বিধিমালা ১৯৭৩/৭৪-এর আইন লঙ্ঘন করে কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন অব্যাহতির চিঠি দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে কালের কণ্ঠ সম্পাদকের কাছে অব্যাহতির কারণ জানতে চেয়ে ৮ ফেব্রুয়ারি চিঠি একটি দেন আহসান হাবিব। চিঠিতে তিনি অষ্টম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ড ঘোষিত ২০১২ সালের ১ জুলাই থেকে পরবর্তী ১৫ মাসের মহার্ঘ্য ভাতা, ২০১৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর থেকে তাঁকে অষ্টম ওয়েজ বোর্ড অনুযায়ী কেন বেতন-ভাতা দেওয়া হয়নি, অষ্টম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন করা হয়েছে মর্মে সরকারকে ‘মিথ্যা তথ্য’ দিয়ে সুবিধা আদায় ও অবৈধ অব্যাহতিপত্র প্রত্যাহারের বিষয়ে জানতে চান। কালের কণ্ঠের সম্পাদক সেই চিঠির কোনো জবাব দেননি।
পরে অব্যাহতি দেওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘন উল্লেখ করে এবং এর প্রতিকার চেয়ে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বরাবর ও তথ্য মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দায়ের করেন সাংবাদিক হাবিব। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের সচিব গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিকের ন্যায্য পাওনা বুঝিয়ে দেওয়াসহ সংবাদকর্মী বিধি আইন মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে কালের কণ্ঠের সম্পাদকের কাছে একটি চিঠি পাঠান। কালের কণ্ঠ কর্তৃপক্ষ এ চিঠিরও কোনো জবাব দেয়নি।
৩০ মার্চ আলী আহসান হাবিব বাদী হয়ে কালের কণ্ঠের সম্পাদক, প্রকাশকসহ ছয়জনকে বিবাদী করে একটি মামলা করেন। গতকাল মামলার শুনানি শেষে বিচারক তারিকুল ইসলাম বিবাদীদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেন।
আদেশ প্রসঙ্গে বাদীপক্ষের আইনজীবী সিরাজুল ইসলাম বলেন, এমন আইন অমান্যকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া না হলে দেশে কোনো অবস্থাতেই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে না। তা ছাড়া সংবাদপত্রের সম্পাদক বা ওই প্রকাশনা শিল্পের সঙ্গে জড়িত কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। সব রকম বিধিমালা ভঙ্গ করে সাংবাদিক হাবিবকে একটি চার লাইনের অব্যাহতিপত্র দেওয়া হয়েছে। এতে একদিকে সাংবাদিক হাবিবের প্রতি মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে, তাঁর সম্মানে আঘাত করা হয়েছে, তাঁকে মহার্ঘ্য ভাতা ও অষ্টম সংবাদপত্র ওয়েজ আইনের তৃতীয় গ্রেড অনুযায়ী বেতন ও অন্যান্য ভাতা না দিয়ে চরম অন্যায় করেছে কালের কণ্ঠ কর্তৃপক্ষ। তাই এমন অবৈধ অব্যাহতিপত্র বাতিল ঘোষণাসহ আত্মসাতের জন্য যেসব পাওনা পরিশোধ করা হয়নি, তা অবশ্যই দিতে হবে। আশা করা যায়, এই মামলার মাধ্যমে প্রমাণিত হবে, আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয় এবং আইন অমান্য করলে শাস্তি পেতে হবে।