ভূমিকম্পে আ.লীগ নেত্রীসহ তিনজনের মৃত্যু
পাবনায় ভূকম্পনে আতঙ্কিত হয়ে রাস্তায় পড়ে আঘাত পেয়ে আজ শনিবার মহিলা আওয়ামী লীগের এক নেত্রীর মৃত্যু হয়েছে। একই সময় বগুড়ার দুঁপচাচিয়া উপজেলায় ঘরের দেয়াল চাপা পড়ে এক গৃহবধূ মারা গেছেন। ভূমিকম্পে আতঙ্কে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে মারা যান আরেক গৃহবধূ।
এ ছাড়া ভূমিকম্পে ঢাকার সাভারের আল মুসলিম গ্রুপের পোশাক কারখানায় হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে আহত হয়েছেন শতাধিক শ্রমিক। আহত শ্রমিকদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। কিন্তু নিহত তরুণ আল মুসলিম কারখানার শ্রমিক নন বলে একাধিক শ্রমিক ও চিকিৎসক জানিয়েছেন।
আজ শনিবার দুপুর ১২টা ১১ মিনিটে দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছুক্ষণ ধরে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার তথ্যমতে, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল নেপালের লামজুং থেকে ২৯ কিলোমিটার পূর্বের একটি এলাকায়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৯। ভারত ও ইউরেশিয়া প্লেটের সংঘর্ষে এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর কেন্দ্রস্থল ছিল ১৫ কিলোমিটার গভীরে।
আমাদের প্রতিবেদকদের পাঠানো খবর:
এ বি এম ফজলুর রহমান, পাবনা : পারিবারিক সূত্র জানায়, ভূমিকম্পের সময় দুপুর সোয়া ১২টার দিকে বাড়ির পাশে গোপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা শেষে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন পাবনা পৌর মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী রোকেয়া খানম ইতি (৬৫)। ভূ-কম্পনে আতঙ্কিত হয়ে রাস্তায় পড়ে আঘাত পান। স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
রোকেয়া খান ইতি পাবনা জেলা কৃষক লীগের সহসভাপতি ও শহরের গোপালপুর মহল্লার সোহরাব হোসেন খানের স্ত্রী। তিনি পাবনা আদর্শ গার্লস হাইস্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা।
সোহরাব হোসেন খান বলেন, আগামীকাল রোববার সকাল ৯টায় পাবনা পুলিশ লাইন মসজিদে জানাজা শেষে আরিফপুর কবরস্থানে রোকেয়া খান ইতিকে দাফন করা হবে।
পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স, পাবনা জেলা পরিষদের প্রশাসক এম সাইদুল হক চুন্নু রোকেয়া খানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
আতিকুর রহমান সোহাগ, বগুড়া: দুঁপচাচিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোপাল চক্রবর্তীর বরাত দিয়ে জানান, আজ ভূমিকম্পের সময় উপজেলার উনাহট সিঙ্গা গ্রামের ঘরে ছিলেন গৃহবধূ মোর্শেদা বেগম (৫৫)। ওই সময় ঘরের দেয়াল চাপা পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়। মরদেহ উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে।
মহব্বত হোসেন, টাঙ্গাইল : এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমূল হক ভূঁইয়া জানান, ভূমিকম্পের সময় গোড়াই শিল্পাঞ্চলের সৈয়দপুর এলাকায় গৃহবধূ পরিনা আক্তার রান্নাঘরে কাজ করছিলেন। ভূমিকম্প শুরু হলে তিনি ভয়ে অচেতন হয়ে পড়েন। স্থানীয় লোকজন তাঁকে কুমুদিনী হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর দেড় বছরের একটি ছেলে রয়েছে।
এদিকে হুড়োহুড়ি করে নামার সময় টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অন্তত ২০ ছাত্রী আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ১১ জনকে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
জাহিদুর রহমান, সাভার : প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সাভারের উলাইল এলাকায় আল মুসলিম গ্রুপের ১০ তলাবিশিষ্ট বিশাল কারখানায় আজ ১০ হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করছিলেন। সোয়া ১২টার দিকে হঠাৎ করে কারখানার বহুতল ভবনগুলো কেঁপে ওঠে। এ সময় কারখানার মেশিন গড়িয়ে পড়লে এবং মাথার ওপরে থাকা ফ্যান বিকট শব্দে নড়াচাড়া করলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন শ্রমিকরা। একযোগে কয়েক হাজার শ্রমিক হুড়াহুড়ি করে নামতে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে আহত হন শতাধিক শ্রমিক।
রোজিনা নামের এক শ্রমিক জানান, হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে পুরুষ শ্রমিকরা তাঁদের পিষ্ট করে নেমে যাওয়ার চেষ্টা করলে তিনি পদপিষ্ট হন।
লাভলী আক্তার নামের এক শ্রমিক জানান, ভবনে ফাটল ধরেছে হঠাৎ করে এই গুজব ছড়িয়ে পড়লে তিনিসহ ওই ফ্লোরে থাকা অন্যরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। হুড়াহুড়ি করে কে কার আগে নামবে তা নিয়ে শুরু হয় প্রতিযোগিতা। যাঁরা অপেক্ষাকৃত দুর্বল, তাঁরাই পদপিষ্ট হন।
এ ঘটনার পর রিকশা, ভ্যান, স্কুটার ও অ্যাম্বুলেন্সে করে একের পর এক আহত শ্রমিকদের সাভারের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়। একযোগে অসংখ্য রোগী সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় হাসপাতালের চিকিৎসক ও সেবিকাদের।
এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সোহেল রানা বলেন, ‘পদপিষ্ট হয়ে আহত ব্যক্তিদের মধ্যে আমাদের হাসপাতালেই ৫২ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে ২০ জনের অবস্থা গুরুতর। আহতদের বেশির ভাগই মাল্টিপল ইনজুরির শিকার। দুপুর দেড়টার দিকে আনুমানিক ২৫ বছর বয়সী এক তরুণ মারা যান। প্রথমে মনে হয়েছিল ওই তরুণ পোশাকশ্রমিক। পরে জানা যায় তিনি আল মুসলিম কারখানার শ্রমিক নন। তাঁর কাছে কারখানার কোনো পরিচয়পত্র পাওয়া যায়নি। কোনো সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হতে পারে।’
এদিকে শ্রমিক আহত হওয়ার ঘটনায় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনে শ্রমিকদের একটি অংশ কারখানায় ভাঙচুর চালায়। এ সময় কারখানা কর্তৃপক্ষের লোকজন ও পুলিশের সাথে শ্রমিকদের ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হন অর্ধশতাধিক ব্যক্তি। এ ঘটনায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে আল মুসলিমসহ আশপাশের পোশাক কারখানাগুলোয় একদিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়।
এ ঘটনায় আল মুসলিম কারখানার কর্তৃপক্ষের কেউ কথা বলতে চাননি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সাভার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান জানান, পরিস্থিতি মোকাবিলায় হাসপাতাল ও কারখানা এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।