সাগরে নিখোঁজ স্বামী, ছেলের লাশ হাসপাতালে
মা নেই, বাবা নেই। নেই শ্বশুর-শাশুড়িও। বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ঝড়ের কবলে পড়ে কদিন আগে নিখোঁজ হয়েছে স্বামী। শনিবার বিকেলে অপুষ্টি আর অসুস্থতা নিয়ে মারা যায় কোলের ছেলে বায়েজিদ।
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার হুইসানপাড়ার দরিদ্র জেলের বধূ রোখসানা (২৭)। এবারে সাগরে ইলিশ পড়লে বাড়ি ফিরে ঘরের সায়-সওদা করার কথা ছিল দরিদ্র স্বামী খলিল হাওলাদারের (৩৫)। ঝড়ের কবলে পড়ে সাগর থেকে তার আর ফেরা হয়নি। বাড়ি থেকে যাওয়ার সময় কোনো টাকাপয়সাও রেখে যেতে পারেননি তিনি।
এদিকে ছোট দুই শিশুসন্তান নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে থেকে দিশেহারা রোখসানা। পাঁচ মাস বয়সের শিশুসন্তান বায়েজিদের শরীরের অবস্থা বেশি খারাপ হয়ে পড়লে ঘর ছেড়ে বের হন রোখসানা। চার বছরের কন্যাশিশু সুমাইয়া আর পাঁচ মাসের বায়েজিদকে নিয়ে শনিবার বিকেলে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে যান রোখসানা।
যত সময় গড়ায়, ততই দুর্বল হয়ে পড়ছিল বায়েজিদ। অজানা, অচেনা, ব্যস্ত হাসপাতাল। কাউকেই চেনেন না রোখসানা। দিশেহারা রোখসানার পাশে দাঁড়ানোরও কেউ নেই। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই চিরতরে নিথর হয়ে পড়ে বায়েজিদ। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চরম অপুষ্টির কারণে একাধিক রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছিল বায়েজিদ।
শনিবার সন্ধ্যার পর চাঁদা তুলে একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে কুয়াকাটার উদ্দেশে রোখসানাকে পাঠানোর ব্যবস্থা করে বরগুনা জেনারেল হাসাপাতালে উপস্থিত জনতা। এ সময় একাকী রোখসানার দুঃখ দেখে তাঁর সহযাত্রী হন বরগুনা হাসপাতালসংলগ্ন অধিবাসী এক নারী। অ্যাম্বুলেন্সে যেতে যেতে খানিক পরপর জ্ঞান হারিয়ে মূর্ছা যাচ্ছিলেন রোখসানা।