আ.লীগ নেতা রিমান্ডে, কাঁদলেন আদালতে
চাঁদাবাজির মামলায় ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মোকাররম মিয়া বাবুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ সোমবার বেলা ১২টার দিকে ফরিদপুরের ১ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক মো. হামিদুর রহমান রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ড মঞ্জুরের আগে ও পরে কান্নায় ভেঙে পড়েন একসময়ের প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা বাবু। চোখের পানিতে তাঁর পাঞ্জাবি ভিজে যায়।
বাবুর বিরুদ্ধে ফরিদপুরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এস এম সরোয়ার হোসেন সন্টু ১৫ লাখ টাকার চাঁদাবাজির মামলা করেছেন। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির আরো পাঁচটি ও একটি ধর্ষণ মামলা রয়েছে।
মামলার বাদী এস এম সরোয়ার সন্টু জানান, গত ৪ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাবু ও তাঁর সহযোগী জেলা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক সত্যজিৎ মুখার্জী তাঁর কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন এবং অস্ত্র প্রদর্শন করে মেরে ফেলার হুমকি দেন। নিজের জীবন রক্ষার্থে সন্টু পরের দিন রাত ৮টার দিকে ধুলদী রেলগেটের কাছে মল্লিক ট্রেডার্সে বসে বাবুকে নগদ ১৫ লাখ টাকা চাঁদা দেন। টাকা নেওয়ার পর বাবু এই বিষয়টি কাউকে জানালে হত্যা করার হুমকি দিয়ে যান। পরে সন্টু বাদী হয়ে বাবু ও সত্যজিতের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় চাঁদাবাজির মামলাটি করেন। গত বৃহস্পতিবার ঢাকার বেইলি রোড থেকে রমনা থানার পুলিশ বাবুকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাঁকে ফরিদপুরে আনা হয়।
ওই মামলায় মোকাররম মিয়া বাবুকে আজ বেলা সোয়া ১১টার দিকে প্রিজনভ্যানে করে সরাসরি আদালতে আনা হয়। এ সময় বাবুর পরনে ছিল অফ হোয়াইট কালারের পাঞ্জাবি, সাদা পায়জামা। পায়ে ছিল চামড়ার স্যান্ডেল। বাবুকে আদালতে আনার সময় তাঁকে বিমর্ষ দেখায়। আদালতে প্রবেশের পর মিনিট দশেকের মতো স্বাভাবিক থাকলেও বাকি সময় আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি। তারপর আদালতে যতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন, ততক্ষণ তাঁকে কাঁদতে দেখা যায়। প্রায় ৪৫ মিনিট তাঁর দুই চোখ থেকে পানি ঝরতে থাকে। আদালতে প্রথমে সিআর মামলাগুলোর শুনানি শেষে জিআর মামলার শুনানি শুরু হয়। বাবুর রিমান্ডের শুনানি বেশ দীর্ঘ সময় চলে।
বাবুর রিমান্ডের বিরোধিতা করে তাঁর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন ফরিদপুর জজ কোর্টের আইনজীবী বদিউজ্জামান বাবুল। তাঁকে সহযোগিতা করেন বাবুর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় আইনজীবী ছরোয়ার, খন্দকার লুৎফর রহমান পিলু, হাবিবুর রহমান হাবিব, তৌহিদুল ইসলাম স্ট্যালিন, শফিক মুন্সী, সায়েমসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী।
অপরদিকে বাবুর বিরুদ্ধে এবং রিমান্ডের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন পাবলিক প্রসিকিউটর খসরুজ্জামান দুলু। তাঁকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী গোলাম রব্বানী বাবু মৃধা, স্বপন পাল, বাবু মোল্লা, জাহিদ ব্যাপারী, কামাল উদ্দীন, শাজাহান মোল্লা, অনিমেষ রায়, শফিকুর রহমান, আবদুস সালাম, শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল, প্রবীর দাস লক্ষণ, সুচিত্রা সিকদার ও অলোকেশ রায়।
আইনজীবীরা আদালতে বাবুকে একজন চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসী উল্লেখ করে তাঁকে সাতদিনের রিমান্ডে দেওয়ার জন্য যুক্তি উপস্থাপন করেন। অপরদিকে বাবুর পক্ষে থাকা আইনজীবীরা তাঁকে একজন ভালো মানুষ এবং রাজনৈতিক নেতা হিসেবে উল্লেখ করে তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশের করা রিমান্ডের তীব্র বিরোধিতা করে জামিনের আবেদন জানান। দুই পক্ষের যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন শেষে বিচারক মো. হামিদুর রহমান সাতদিনেরই রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
বাবুকে নিরাপত্তাজনিত কারণে সাধারণ আসামিদের মতো ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নিচে অবস্থিত হাজতখানায় না নিয়ে প্রিজন ভ্যানে করে সরাসরি আদালতে নিয়ে আসা হয়।
রিমান্ডের শুনানি শেষে এক মুহূর্ত দেরি না করে দ্রুত আদালত চত্বর থেকে প্রিজন ভ্যানে করে আবার জেলা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
আদালতে প্রবেশের পর থেকে বেরিয়ে যাওয়া পর্যন্ত বাবু অঝোর ধারায় কাঁদেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘আজ আমি ধর্ষক, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী। আমার আর কোনো কিছুই চাওয়ার নাই। আমার একটি চাওয়া আর সেটি হচ্ছে আমার পিতা যেন আমাকে ক্ষমা করে দেন।’ এভাবে কথা বলতে বলতেই বাবুকে প্রিজন ভ্যানে তুলে কারাগারে নিয়ে যায় পুলিশ।
কাল আরেকটি মামলার শুনানি : আরেকটি চাঁদাবাজির মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কাল মোকাররম মিয়া বাবুর রিমান্ডের শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। ফরিদপুর শহর যুবলীগের সভাপতি সাজ্জাদ হোসেন বরকতের করা ৫০ লাখ টাকার চাঁদাবাজির মামলায় পুলিশ সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন করেছে।