জবির আন্দোলনে আবারও ছাত্রলীগের হামলা
হলের দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে আজ সোমবার দ্বিতীয় দিনের মতো হামলা করেছে ছাত্রলীগ। হামলায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। আজ সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনের সামনে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে ভাঙচুর করে ছাত্রলীগ। এ সময় ওই কার্যালয় থেকে প্রায় দুই লাখ টাকার মালামাল লুটের অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আজ সকাল ৮টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থীরা হলের দাবিতে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে ক্যাম্পাসের শান্ত চত্বরের সামনে জড়ো হতে থাকে। একপর্যায়ে সর্বস্তরের শিক্ষার্থীরা একযোগে মিছিল নিয়ে পুরো ক্যাম্পাস কয়েক বার প্রদক্ষিণ করে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের শতাধিক নেতাকর্মী ক্যাম্পাসে ফটকের সামনে অবস্থা নেয়। সকাল ১০টার দিকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগের ব্যানারে আন্দোলন করার জন্য চাপ সৃষ্টি করলে শিক্ষার্থীরা রাজি না হয়ে ক্যাম্পাসের কাঠালতলায় অবস্থান নেয়। ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এফ এম শরিফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক এস এম সিরাজুল ইসলাম কয়েকজন কর্মী নিয়ে শিক্ষার্থীদের অবস্থান বানচাল করতে যান। তাঁরা শিক্ষার্থীদের মাইক কেড়ে নিয়ে ছাত্রলীগের সঙ্গে স্লোগান দিতে জোর করেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের আহ্বানে সাড়া না দিলে ছাত্রলীগের নেতারা কয়েকজন শিক্ষার্থীকে টেনে নিয়ে ব্যাপক মারধর করে। শিক্ষার্থীরা ভয়ে অবস্থান ত্যাগ করে শান্ত চত্বরের সামনে যেতে চাইলে ছাত্রলীগের কয়েক শ নেতা-কর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনের সামনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। এতে ছাত্রীসহ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। এর মধ্যে ১০ থেকে ১২ জন গুরুতর আহত হয়। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করলে তাঁরা সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে গিয়ে অবস্থান নেয়। এখানে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রায় দুই ঘণ্টা পর্যন্ত আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে রাখে।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নূর মোহাম্মদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা বিষয়ে আমার কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সাংবাদিক সমিতির কার্যালয় ভাঙচুর
গত রোববার ‘লেখাপড়া ডটকমে’র সাংবাদিককে মারধর করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এরই প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি ছাত্রলীগের সব ইতিবাচক খবর বর্জন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একটি দল কয়েকজন সাংবাদিককে নিয়ে সমিতির কার্যালয়ের দিকে যান। এ সময় ছাত্রলীগের সাবেক কমিটির নেতারাও যোগ দেন। পরে তাঁরা সমিতির কার্যালয় ভাঙচুর করেন।
এ ব্যাপারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির সভাপতি সোহায়েল মিয়া জানান, সমিতির কার্যালয়ে কোনো সাংবাদিক না পেয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ভাঙচুর ও লুটপাট করে। তিনি জানান, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দুটি ল্যাপটপ, একটি ডিএসএলআর ক্যামেরা এবং মোবাইল ফোনসহ প্রায় দুই লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিক সমিতির পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সভাপতি সোহায়েল মিয়া।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, এ রকম পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সাংবাদিক সমিতির কার্যালয় বন্ধ করে দেয়। কিন্তু পরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আবারো তালা ভেঙে ভাঙচুর করে। পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যালয় সিলগালা করে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে প্রক্টর নূর মোহাম্মদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সাংবাদিক সমিতির কার্যালয় সিলগালা থাকবে।’