নামাজকে সালাত বলায় ফতোয়া, আবারও বিয়ে
এক ব্যক্তি নামাজকে সালাত বলায় ইমান নষ্ট হয়ে গেছে বলে ফতোয়া জারি করা হয়। ফতোয়ায় বলা হয়, ইমান নষ্ট হওয়ায় স্ত্রীর সাথে তালাক হয়ে গেছে। এ জন্য আবারও বিয়ে করতে হবে। এই ফতোয়া জারি করে ১৮ বছরের পুরোনো দম্পতিকে আবারও বিয়ে পড়ান সমাজপতিরা।
সম্প্রতি মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বড়টিয়া ইউনিয়নে এই ঘটনা ঘটে।
ফতোয়ার শিকার ওই ব্যক্তি পেশায় নির্মাণশ্রমিক (রাজমিস্ত্রি)। বয়স প্রায় ৪০ বছর। স্ত্রীর বয়স ৩৬ বছর।
ওই ব্যক্তি জানান, গত ২২ এপ্রিল একটি দৈনিক সংবাদপত্রে প্রকাশিত ‘নামাজ নয় সালাত’ প্রবন্ধ পড়ে তিনি এ নিয়ে গ্রামের পল্লী চিকিৎসক আলাউদ্দিন ও হাবিবের সঙ্গে কথা বলেন। বিষয়টি নিয়ে তাঁদের সঙ্গে তাঁর তর্ক হয়। একপর্যায়ে আলাউদ্দিন ও হাবিব বিষয়টি স্থানীয় হিলফুল ফুজুল এতিমখানা ও মাদ্রাসার সুপার মাওলানা কাজী ফকরুদ্দিনকে জানান। কাজী ফকরুদ্দিন ফতোয়া জারি করেন, নামাজকে সালাত বলায় তাঁর ইমান নষ্ট হয়ে গেছে। আর ইমান নষ্ট হয়ে গেলে তওবা করে পুনরায় স্ত্রীকে বিয়ে করতে হবে। মুহূর্তে বিষয়টি নিয়ে এলাকায় মানুষের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। পরের দিন রাতে কাজী ফকরুদ্দিন এলাকার লোকজন নিয়ে ওই ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে সালিস বসান এবং তাঁর দেওয়া ফতোয়া কার্যকরের চেষ্টা করেন। ব্যর্থ হয়ে সমাজপতিরা নানা হুমকি-ধমকি দিয়ে চলে যান। এরপর গত ২৭ এপ্রিল সোমবার দুপুরে হিজুলিয়া জামে মসজিদে বিষয়টি নিয়ে আবারও কাজী ফকরুদ্দিন, মুফতি হান্নান ও বড়টিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) স্থানীয় ওয়ার্ডের সদস্য রমজান আলীসহ এলাকার লোকজন সালিসে বসেন। সেখানে ওই ব্যক্তি ও তাঁর স্ত্রীকে নানা ভয়-ভীতি দেখিয়ে হাজির করেন এবং আবার কলেমা পড়িয়ে বিয়ে দেওয়া হয়।
ওই ব্যক্তির স্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, তাঁরা এলাকার নিরীহ পরিবার। সমাজপতি ও মাওলানারা ধর্মের অপব্যাখা দিয়ে তাঁদের সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন ও অবিচার করেছেন। সমাজপতিদের অব্যাহত ভয়-ভীতি দেখানোর ফলে তাঁরা কোনো প্রতিবাদ করতে সাহস পাননি।
এ ব্যাপারে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ইউপি সদস্য রমজান আলী কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন।
মাওলানা কাজী ফকরুদ্দিন সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, ‘ইমান নষ্ট হলে স্ত্রীর সাথে তালাক হয়ে যায়। তাই তাদের আবারও বিয়ে দেওয়ার ফতোয়া কার্যকর করা সঠিক হয়েছে।’ তবে নামাজকে সালাত বললে ইমান নষ্ট হয় এবং ইমান নষ্ট হলে স্ত্রীর সাথে তালাক হয়ে যায়- এই বিষয়টি পবিত্র কোরআন শরিফ বা হাদিস শরিফের কোথায় লেখা আছে জানতে চাইলে ফকরুদ্দিন জানাতে পারেননি।
ফকরুদ্দিনের ফতোয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে মানিকগঞ্জ কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ আবু মূছা বলেন, ‘নামাজকে সালাত বললে কারো ইমান নষ্ট হয় না, সেই সাথে স্ত্রীর সাথে তালাকও হয় না। এভাবে ধর্মের অপব্যাখা দিয়ে ফতোয়া জারি করা ঠিক হয়নি।’
যোগাযোগ করা হলে জেলার শিবালয় সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হারুন-অর রশিদ জানান, বিষয়টি কেউ পুলিশকে জানায়নি। উচ্চ আদালতের নির্দেশে ফতোয়া জারি বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান তিনি।