স্কুল-কলেজের মাঠজুড়ে গরু-ছাগলের হাট
বরগুনার বামনা উপজেলার ডৌয়াতলা ইউনিয়নের প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থীর দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২০ বছর ধরে নিয়মিত গরু-ছাগলের হাট বসছে। এতে খেলার মাঠ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
যত্রতত্র গরু-ছাগলের মলমূত্র পড়ে থাকায় নোংরা হয়ে থাকছে পরিবেশ। কখনো কখনো বিভিন্ন বয়সী ক্রেতা-বিক্রেতাদের উত্ত্যক্তের শিকার হচ্ছে ছাত্রীরা। স্থানীয় নেতা থেকে শুরু করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এমনকি জেলা প্রশাসকের কাছে গিয়েও কোনো সুরাহা পাননি ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবকরা।
আজ রোববার দুপুরে ডৌয়াতলা ইউনিয়নের এ গরুর হাট পরিদর্শনে আসেন বামনা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মনির হোসেন হাওলাদার এবং বামনা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইতুল ইসলাম লিটু মৃধা।
এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইউএনও মোহাম্মদ মনির হোসেন হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘স্কুল-কলেজের চেয়ে গরু-ছাগলের হাটের গুরুত্বও কম নয়।’
ইউএনও আরো বলেন, ‘মৌলিক চাহিদার মধ্যে খাদ্যের অবস্থান শিক্ষার আগে।’
গরুর হাট পরিদর্শনকালে একই সুরে কথা বলেন উপজেলা চেয়ারম্যান সাইতুল ইসলাম লিটু মৃধা। তিনি বলেন, ‘স্কুলের কারণে গরুর হাট ও বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কথা ভাবলেই হবে না। হাট-বাজারের উন্নয়নের কথাও ভাবতে হবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক বছর দুই বছর নয়, ২০ বছর ধরেই চলছে গরু-ছাগলের হাটের নামে শিক্ষক-শিক্ষার্থী বিড়ম্বনার এসব কর্মকাণ্ড। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), ইউএনও এমনকি জেলা প্রশাসকের কাছে ধরনা দিয়েও মেলেনি কোনো প্রতিকার।
১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত বামনা উপজেলার ডৌয়াতলা ইউনিয়নের একটি মাত্র স্কুলকে ঘিরে প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন এখানে ধীরে ধীরে গড়ে তোলেন একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রায় চার একর জমি নিয়ে এ শিক্ষাকেন্দ্রে গড়ে ওঠে কলেজ, শহিদ স্মৃতিসৌধ এবং কর্মজীবী নারী ও অসহায় শিশু-কিশোরী ছাত্রীনিবাসও।
সম্মিলিত এ শিক্ষাকেন্দ্রের অন্যতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হলতা ডৌয়াতলা ওয়াজেদ আলী খান ডিগ্রি কলেজ। কলেজটিতে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে।
একই প্রাঙ্গণে অপর একটি স্কুলের নাম হলতা ডৌয়াতলা সমবায় বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এখানে রয়েছে ৮২৪ জন নিয়মিত শিক্ষার্থী। কর্মজীবী নারী ও অসহায় শিশু-কিশোরী ছাত্রীনিবাসেও রয়েছে অর্ধশত শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী নারী।
আজ দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, সম্মিলিত এ শিক্ষাকেন্দ্রের ফটক দিয়ে দলে দলে গরু-ছাগল নিয়ে প্রবেশ করছেন বিক্রেতারা। প্রবেশ করছেন বিভিন্ন বয়সের শত শত ক্রেতাও। একই সঙ্গে গরু-ছাগল আর মানুষের ভিড় ঠেলে প্রবেশ করছে শিক্ষার্থীরাও। একই গেটে দাঁড়িয়ে ছাত্রীদের দিকে শিষ দিতে দেখা যায় উঠতি বয়সের দুই যুবককে।
হলতা ডৌয়াতলা সমবায় বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাতিমা আক্তার জানায়, প্রতি সপ্তাহের রোববার ও বৃহস্পতিবার দুদিন এখানে হাট বসে। হাটের দিন গরু-ছাগল নিয়ে শত শত ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম হয় এ হাটে। এতে প্রায়ই বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হয় তাদের। খেলাধুলার সুযোগও থাকে না।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নূরুল হক খান জানান, একই প্রাঙ্গণে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষার মূল কেন্দ্র চলে আসছে। শিক্ষাঙ্গন সংকটের এ অঞ্চলে প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের প্রচেষ্টায় এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নানাবিধ উন্নয়ন ঘটেছে। সম্মিলিত এ শিক্ষাঙ্গনকে ঘিরে সেলিনা হোসেনের অনেক স্বপ্ন রয়েছে। অথচ দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী কুচক্রী মহল নানাভাবে এই শিক্ষাকেন্দ্রটির ক্ষতিসাধনে উঠেপড়ে লেগেছে। বারবার স্থানীয় প্রশাসনের শরণাপন্ন হয়েও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থীর জন্য পর্যাপ্ত মাঠ থাকা সত্ত্বেও খেলার জন্য মাঠ ব্যবহার করা যাচ্ছে না। মুক্তিযুদ্ধ আর সাংস্কৃতিক চেতনা জাগাতে এখানে গড়ে তোলা হয়েছে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ। এই স্তম্ভের ওপরও গরুর হাট বসছে যা মেনে নেওয়া যায় না। শত শত শিক্ষার্থীর বিড়ম্বনার কথা ভেবে তা অন্যত্র স্থানান্তরের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা চান তিনি।