রোববার বুদ্ধপূর্ণিমা
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব গৌতম বুদ্ধের জন্মোৎসব বুদ্ধপূর্ণিমা আগামীকাল রোববার। গৌতম বুদ্ধের জন্ম, বোধিজ্ঞান ও মহাপরিনির্বাণ লাভ এই ত্রিস্মৃতিবিজড়িত বৈশাখী পূর্ণিমা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। বিশ্বের সকল বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কাছে এটি বুদ্ধপূর্ণিমা নামে পরিচিত।
বৌদ্ধধর্ম মতে, দুই হাজার ৫৫৮ বছর আগে এই দিনে মহামতি গৌতম বুদ্ধ আবির্ভূত হয়েছিলেন। তাঁর জন্ম, বোধিলাভ ও মহাপ্রয়াণ বৈশাখী পূর্ণিমার দিনে হয়েছিল বলে এর (বৈশাখী পূর্ণিমা) অপর নাম দেওয়া হয় ‘বুদ্ধপূর্ণিমা’।
বার্তা সংস্থা বাসস জানায়, এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে এ দিন সরকারি ছুটি।
যথাযথ ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে বৌদ্ধ সম্প্রদায় তাঁদের এ প্রধান ধর্মীয় উৎসব উদযাপনের জন্য নানা কর্মসূচি নিয়েছে।
বুদ্ধের জীবনাদর্শ গুরুত্বপূর্ণ : রাষ্ট্রপতি
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, অশান্ত বিশ্বে বুদ্ধের জীবনাদর্শ গুরুত্বপূর্ণ। তিনি অনুসন্ধিৎসু গবেষণার মাধ্যমে বৌদ্ধধর্মের প্রাচীন সভ্যতা, কৃষ্টি ও ঐতিহ্যকে বিশ্বদরবারে পরিচিতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে নতুন উচ্চতায় তুলে ধরতে বিদগ্ধ গবেষক, পণ্ডিত ও বৌদ্ধ চিন্তাবিদদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে আজ এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি এ আহ্বান জানান। রাষ্ট্রপতি বাণীতে বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মৈত্রীময় শুভেচ্ছা জানান।
রাষ্ট্রপতি বলেন, আজকের এই অশান্ত ও অসহিষ্ণু বিশ্বে মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধ ও সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বুদ্ধের জীবনাদর্শ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বিত্তের মধ্যে বড় হয়েও তিনি উপলব্ধি করেছিলেন ‘ভোগে সুখ নেই, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ’। তাঁর এই মর্মবাণী মানব আত্মাকে পরিশুদ্ধ এবং শান্তিময় করে তুলতে পারে। গড়ে তুলতে পারে একটি অহিংস মানবিক সমাজ।
দেশে মানুষ মুক্ত পরিবেশে নিজ ধর্ম পালন করে : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, হিংসার উন্মত্ত পাশবিক শক্তি দমন করার জন্য আজকের পৃথিবীতে গৌতম বুদ্ধের শিক্ষা একান্ত প্রয়োজন। শান্তি ও সম্প্রীতির মাধ্যমে আদর্শ সমাজ গঠনই ছিল তাঁর একমাত্র লক্ষ্য। বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে আজ দেওয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে দেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায়সহ দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভয়, লোভ, লালসাকে অতিক্রম করে গৌতম বুদ্ধ সারা জীবন মানুষের কল্যাণে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় অহিংসা, মৈত্রী ও করুণার বাণী প্রচার করেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এ দেশে প্রত্যেক ধর্মের মানুষ মুক্ত পরিবেশে নিজ নিজ ধর্ম নির্বিঘ্নে প্রতিপালন করে থাকেন।
‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’- আমরা এ নীতিতে বিশ্বাসী উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে আমরা বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।’
সব ধর্মের মানুষ সৌহার্দ্যের বন্ধনে আবদ্ধ : খালেদা জিয়া
বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বলেছেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। বাংলাদেশে সকল ধর্মের অনুসারীরা পারস্পরিক সৌহার্দ্যের বন্ধনে আবদ্ধ। তিনি আজ বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে এক বাণীতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান।
খালেদা জিয়া বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী দর্শনেই এ দেশের সকল বর্ণ, ধর্মীয় সম্প্রদায় ও নৃগোষ্ঠীসমূহের সম্মিলিত আকাঙ্ক্ষার স্ফুরণ ঘটেছে উল্লেখ করে বাণীতে বলেন, ‘আমরা ধর্মীয় সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘু বিভাজনে বিশ্বাস করি না। আমরা সবাই বাংলাদেশি। ধর্মীয় সম্প্রীতি এবং সকল ধর্মের মর্যাদা রক্ষায় আমরা সব সময় সচেষ্ট থেকেছি এবং আগামীতেও সে প্রয়াস অব্যাহত থাকবে।’
নানা কর্মসূচিতে বুদ্ধপূর্ণিমা
রাজধানীর সবুজবাগ বৌদ্ধবিহারের অফিস সেক্রেটারি বিদর্শন বড়ুয়া জানান, সকাল সাড়ে ৭টায় ধর্মরাজিক বৌদ্ধবিহার থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হবে। ৯টায় অনুষ্ঠিত হবে স্বধর্মসভা। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। বিশেষ অতিথি থাকবেন সাবেক মন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া। এ ছাড়া বিকেল ৫টায় সবুজবাগ বৌদ্ধবিহার মিলনায়তনে ‘বৌদ্ধ ধর্ম ও বিশ্ব শান্তি’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী এবং বিশেষ অতিথি থাকবেন নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফাদার বেঞ্জামিন ডি কস্তা।
এদিকে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ও সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট প্রমোদ মানকিন এমপি এবং মহাসচিব নির্মল রোজারিও এক যুক্ত বিবৃতিতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ভাই ও বোনদের বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
নেতৃবৃন্দ তাঁদের বিবৃতিতে বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে বৌদ্ধধর্মের মূল চেতনা- সাম্য, মৈত্রী, শান্তি ও ভ্রাতৃত্ববোধের আলোকে বিশ্বময় মানুষে মানুষে সম্প্রীতির বন্ধন গড়ে তুলতে বিশেষ অবদান রাখতে সক্ষম হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। নেতৃবৃন্দ আশা প্রকাশ করেছেন, ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে বুদ্ধপূর্ণিমা সবার জন্য সুখ, সমৃদ্ধি ও আনন্দের বারতা বয়ে আনবে।