ফরিদপুরের মানুষের দাঁতে কত বিষ : প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী
ফরিদপুরের কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার সমালোচনা করে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘আমার ঘরে বঙ্গবন্ধুর নাতনি রয়েছে।
অথচ তাঁরা বলে আমি নাকি রাজাকার ছিলাম। এতেই বোঝা যায় ফরিদপুরের মানুষের দাঁতে কত বিষ। ভালো কাজের প্রশংসা না করে এরা দুর্নাম-বদনাম নিয়ে ব্যস্ত থাকে।’
আজ রোববার ফরিদপুরের কবি জসীমউদদীন হলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। সদর উপজেলা পরিষদ আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, দলিত হরিজন ও বেদে জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৃত্তি, জেলেদের মধ্যে জাল ও আইডি কার্ড বিতরণ এবং দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে ঢেউটিন বিতরণ করা হয়। মন্ত্রী মোট ৭৪ জনের মধ্যে চার লাখ ১৫ হাজার টাকার অনুদানের চেক ও সহায়তা সামগ্রী তুলে দেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুলের সাথে খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ছেলে খন্দকার মাশরুর হোসেনের বিয়ে হয়েছে।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমার জীবনে যা কিছু চাওয়া-পাওয়ার ছিল তা আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন। তাই জীবন যতদিন থাকবে তা মানুষের জন্য উৎসর্গ করলাম। প্রতিদিন ভোর ৫টায় ঘুম থেকে উঠি আমি। অসংখ্য মানুষের সাথে কথা বলি। তাদের সমস্যার কথা শুনি এবং সমাধানের চেষ্টা করি। আমি এখানে নিজের ঢোল পেটাতে আসিনি। শারীরিক অসুস্থতা থাকলেও প্রতি সপ্তাহে ফরিদপুরে আসি। ফরিদপুরের উন্নয়ন করাই হচ্ছে আমার একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। এর বাইরে আমার কোনো কাজ নেই।’
প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী বলেন, ‘বিগত দিনে আজকের মতো অনুদানের টাকা এত বড় অনুষ্ঠান করে দেওয়া হতো না। কারণ এই টাকা চলে যেত মানুষের পকেটে। বেদে, জেলে, তাঁতি কোনো গোষ্ঠীই আর পিছিয়ে থাকবে না। আমাদের সবার পরিচয় আমরা মানুষ।’
‘এই অনুষ্ঠানে নিজের প্রশংসা শুনে আমি লজ্জা পেয়েছি। তবে কাজ করলে তো প্রশংসা শুনতেই হবে। এই বৃদ্ধ বয়সে আমার কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। আমার একটি প্রত্যাশা আর তা হলো আমার জানাজায় যেন প্রচুর লোক হয়।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেয়াই খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘শেখ হাসিনার সরকার নারীশিক্ষার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। একজন মা শিক্ষিত হলে বাংলাদেশ শিক্ষিত হবে। আর এ লক্ষ্যেই শিক্ষাব্যবস্থাকে এগিয়ে নিতে আমরা শিক্ষাবৃত্তি চালু করেছি। শেখ হাসিনা যখন জাতিকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, ঠিক সেই মুহূর্তে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষার সময় নির্বোধের মতো হরতাল-অবরোধ ডেকে বাঙালি জাতিকে নিরক্ষর জাতিতে পরিণত করার চেষ্টা করছেন। আসলে যার মধ্যে শিক্ষা নেই, সে শিক্ষার মর্যাদা দিতে পারে না।’
মন্ত্রীর ছোট ভাই সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক সরদার সরাফত আলী। এতে বক্তব্য দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুর রহমান, রাজেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ছাত্রী কল্পনা মালো, তানিয়া আক্তার, আফরোজা আক্তার ও মো. তৌহিদুল।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা মাইনুদ্দিন আমদেম মানু, সামছুল আলম চৌধুরী, জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক এ এইচ এম ফুয়াদ, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ফাহাদ বিন ফাহিন, শহর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আসিবুর রহমান ফারহান।
প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমার জীবন উৎসর্গ করেছি ফরিদপুরের উন্নয়নের জন্য। আমার মিটিংয়ে যদি এক লাখ মানুষ হয় আর চারটি রাস্তা বন্ধ হয়ে যায় তবে সেখানে আমার কী করার আছে। আমি আশা করেছিলাম জনৈক সাংবাদিক লিখবেন মে দিবসের সমাবেশে জনতা ব্যাংকের মোড়ে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে একসময় রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। চিন্তা করেছিলাম আমার মিটিংয়ের একটি ছবি তাঁর পত্রিকায় ছাপা হবে কিন্তু পত্রিকা খুলে আমি সেই সংবাদটি পাইনি।’
মন্ত্রী সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘শুধু ভালো কাজের পেছনে খোঁচাখুঁচি না করে ভালো খবর আবার মন্দ খবরও লিখবেন। শুধু মন্দটা লিখলে চলবে না। আমার দাদা কৈজুরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন ৫০ বছর, আমার বাবা নুরু মিয়া ছিলেন ২৫ বছর। আমিও বাবার অনুরোধে চেয়েছিলাম তাঁদের মতো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হওয়ার। কিন্তু ভাগ্য আমাকে তা হতে দেয়নি। আপনারা আমাকে এমপি বানিয়েছেন বলেই শেখ হাসিনা আমাকে তিনবার মন্ত্রী বানিয়েছেন।’