শেষ মুহূর্তেও জমে ওঠেনি নগরকান্দা উপনির্বাচন
শেষ মুহূর্তে এসেও জমে ওঠেনি ফরিদপুরের নগরকান্দা পৌরসভার মেয়র পদে উপনির্বাচন। ভোটারদের মধ্যেও নেই তেমন কোনো উৎসাহ উদ্দীপনা। আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মো. রায়হান উদ্দীন ওরফে রব্বেল মাস্টার নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় অংশ নিলেও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মো. আসাদুজ্জামান ফরিদপুর শহরে বসেই নির্বাচনী কাজ করছেন।
আসাদুজ্জামানের অভিযোগ তাঁকে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে দিচ্ছেন না সরকারদলীয় সমর্থকরা। এমনকি পুলিশি হয়রানির ভয়েও মাঠে নামতে পারছেন না তাঁর কর্মী-সমর্থকরা। তবে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী তিনি।
তবে আসাদের এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী রায়হান উদ্দীন মাস্টার। তিনি বলেন, একজন প্রার্থী হিসেবে আমি যতটুকু সুযোগ সুবিধা পাচ্ছি আমার প্রতিদ্বন্দ্বী ঠিক ততটুকু সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। আমি কোনো বাড়তি সুবিধা পাচ্ছি না।’ নির্বাচনী আচরণবিধি পুরো মেনে চলার চেষ্টা করছেন বলেও জানান তিনি।
বিগত নির্বাচনগুলোর মতো এবারের উপনির্বাচনে নেই কোনো উৎসবের আমেজ। মাত্র ৯ মাসের জন্য মেয়র নির্বাচিত হবেন এই কারণেও এমনটি হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। তবে এখন উপনির্বাচনে যিনি মেয়র নির্বাচিত হবেন আগামী ৯ মাস পর অনুষ্ঠেয় মূল নির্বাচনে তিনি দল থেকে আবার মনোনয়ন পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সরেজমিনে নগরকান্দা গিয়ে সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও এ উপনির্বাচনকে ঘিরে খুব বেশি উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ করা যায়নি। এমনকি তাদের কোনো পোস্টার-বিলবোর্ড বা ব্যানার-ফেস্টুও চোখে পড়েনি। তবে পরিবেশ যেমনই হোক না কেন শেষ মুহূর্তে এসে দুই বড় রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা সমান তালে ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা করছেন। দিয়ে যাচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আওয়ামী লীগের প্রার্থী রায়হান উদ্দীন মেয়র নির্বাচিত হতে পারলে নগরকান্দা পৌর এলাকাকে সন্ত্রাসমুক্ত, চাঁদাবাজমুক্ত, অনিয়ম দুর্নীতিমুক্ত এবং পৌরসভার ব্যাপক উন্ননের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ ছাড়া পানির সমস্যা, বিদ্যুৎ সমস্যা, ড্রেনেজ সমস্যার সমাধান এবং পুরুষদের জন্য একটি নিউ মার্কেট এবং নারীদের জন্য আলাদাভাবে একটি মহিলা মার্কেট নির্মাণ করে দেবেন।
অন্যদিকে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মো. আসাদুজ্জামান বয়সে একবারেই তরুণ। আসাদ নগরকান্দা থানা ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন এবং বর্তমানে নগরকান্দা উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক। তাঁর বাবা জাফর হোসেন ও চাচা সাবেক মেয়র জাহিদ হোসেন খোকনকে নিয়ে এলাকায় ব্যাপক বিতর্ক আছে। তাই স্থানীয়দের অনেকেই বলছেন, এই নির্বাচন হবে স্বাধীনতার পক্ষ ও বিপক্ষ শক্তির মধ্যে।
শেষ মুহূর্তে নির্বাচন জমে না উঠলেও এর মধ্যেই কে মেয়র হলে এই অবহেলিত পৌরসভার উন্নয়ন ও পৌরবাসীর বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দিতে পারবেন সে বিষয়ে ভোটাররা নানা হিসাব-নিকাশ করছেন। তবে যিনি নির্বাচিত হলে পৌর ভবন নির্মাণ, পানির সমস্যা সমাধান, বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, ড্রেনেজ সমস্যার সসমাধান দিতে পারবেন তাঁকেই নির্বাচিত করার জন্য ভোট প্রদান করবেন সাধারণ ভোটাররা।
১৯৯৯ সালে গঠিত নগরকান্দা পৌরসভার একটি নিজস্ব ভবন নেই। দীর্ঘ ১৬ বছর অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত পৌরসভার কার্যক্রম চলছে ডাকবাংলো ভবনে। পৌরসভার সাধারণ মানুষ একটি আধুনিক পৌর ভবন নির্মাণের দাবি করে আসছে দীর্ঘ দিন ধরে।
যুদ্ধাপরাধী মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নগরকান্দা পৌরসভার মেয়র বিএনপি নেতা জাহিদ হোসেন খোকন পলাতক থাকায় মেয়র পদটি শূন্য হওয়ায় এই পদে আগামী ৬ মে বুধবার উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। রায়হান উদ্দীন নারিকেল গাছ এবং মো. আসাদুজ্জামান জগ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নগরকান্দা পৌরসভার মোট ভোটার সংখ্যা সাত হাজার ৫১৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার তিন হাজার ৭৮৯ জন এবং নারী ভোটার তিন হাজার ৭৩০ জন। ৬ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৯টি। শেষ পর্যন্ত নগরকান্দা পৌরসভা নির্বাচনে কে মেয়র হবেন এবং শেষ হাসিটা কে হাসবেন তা দেখার জন্য ভোটারদের অপেক্ষা করতে হবে ৬ মে বুধবার পর্যন্ত।