সাংসদ আমানুরের ফাঁসি দাবি আ. লীগের
টাঙ্গাইলের মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদ হত্যা মামলায় ঘাটাইলের সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানার ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে তাঁর দল আওয়ামী লীগ। সংসদ সদস্যের সঙ্গে চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার আসামি তাঁর তিন ভাইয়েরও বিচার দাবি করেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে স্থানীয় শহীদ মিনারে জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত এক জনসমাবেশে নেতারা এ দাবি জানান।
এ সময় মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদের স্ত্রী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক নাহার আহমেদ বলেন, মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহম্মদ দেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন। অথচ দেশের মাটিতে তাঁকেই হত্যা করা হয়েছে। এই খুনিরা দেশ ও জাতির শত্রু। তাদের কোনো দল নেই, আদর্শ নেই। যারা মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করতে পারে, তারা স্বাধীনতাবিরোধী শত্রুর চেয়েও জঘন্য।
বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেন নাহার আহমেদ। তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যা মামলার বিচার না হলে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি চরম অবহেলা করা হবে। তাই সবাইকে এ হত্যার বিচারের দাবিতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান এ আওয়ামী লীগ নেতা।
সমাবেশে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম বলেন, এই খুনিচক্র এর আগেও টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে দূষিত করার চেষ্টা করেছে। পরিকল্পিতভাবে তারা আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে নষ্ট করেছে। তাদের বিচার হতেই হবে। না হলে মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদ হত্যাকাণ্ডের মতো আরো ঘটনা ঘটবে।
জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আনিছুর রহমানে সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন
আরো বক্তব্য দেন টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জামিলুর রহমান মিরন, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুজ্জামান সোহেল, জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক তানভীর হাসান ছোট মনিরসহ আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন সহযোগী ও বন্ধুপ্রতীম সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এর আগে ফারুক হত্যার খুনিদের ফাঁসির দাবিতে একটি বিক্ষোভ মিছিল শহীদ মিনার চত্বর থেকে বের হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ঘুরে আবার শহীদ মিনারে এসেই শেষ হয়।
টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের নেতা ফারুক আহমদকে ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পরে তাঁর লাশ একটি অটোরিকশায় তুলে টাঙ্গাইল জেলা শহরের কাছে ফেলে চলে যায়।
এ ঘটনায় ফারুক আহমদের স্ত্রী নাহার আহম্মেদ বাদী হয়ে টাঙ্গাইল মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এর পর এ বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের গোয়েন্দা পুলিশ টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানাসহ ১৪ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।
মামলায় সংসদ সদস্যের তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সহিদুর রহমান খান মুক্তি, জেলার সাবেক ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকন ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পাকেও আসামি করা হয়।
এ ছাড়া মামলার অন্য আসামিরা হলেন আনিসুল ইসলাম রাজা, কবির হোসেন, সাবেক কমিশনার মাসুদ মিয়া, চান, নুরু, সানোয়ার হোসেন, দাঁতভাঙা বাবু, ফরিদ হোসেন, আবদুল হক ও সমির হোসেন।
গত ৬ এপ্রিল আসামিদের গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করেন আদালত। চলতি মাসের ১৮ তারিখ টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে হাজির হয়ে আত্মসমর্পন করেন মামলার প্রধান আসামি সংসদ সদস্য আমানুর। পরে তিনি জামিন আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালতের বিচারক আবুল মনসুর মিয়া সংসদ সদস্যের জামিন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।