টাঙ্গাইলের ডিসি লেক উদ্বোধন, দর্শনার্থীদের ভিড়
অবশেষে টাঙ্গাইলবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হলো। ব্যস্ততার ফাঁকে পরিবারের সদস্য বা বন্ধুদের নিয়ে সময় কাটানোর জন্য ‘ডিসি লেক’ উদ্বোধন করা হলো।
স্বাধীনতার ৪৫ বছরেও বিনোদনের জন্যে টাঙ্গাইলে গড়ে ওঠেনি কোনো দর্শনীয় স্থান। যেখানে প্রিয়জনদের সঙ্গে নিয়ে একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলা যায়। টাঙ্গাইলের ডিসি লেক এখন জেলাবাসীর কাছে খুবই প্রিয় দর্শনীয় স্থান হিসেবে ধরা দিয়েছে।
জেলা সদরের সার্কিট হাউসের পাশে প্রায় সাড়ে ৩৩ একর জমিতে গড়ে উঠেছে এই বিনোদনকেন্দ্রটি। প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বিনোদনকেন্দ্রে এখন দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। প্রতিদিনই এখানে দর্শনার্থীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সব বয়সী মানুষের প্রিয় হয়ে উঠেছে টাঙ্গাইলের নয়নাভিরাম ডিসি লেক।
প্রকৃতি আর প্রযুক্তির অপূর্ব সমন্বয়ে গত কয়েক মাসেই বিনোদনপ্রেমীদের জন্যে বাস্তবায়িত হয় ডিসি লেকের এই অপরূপ সৌন্দর্য। লেকের মধ্যে লাল ইটের তৈরি ছাদে আর বড় গম্বুজাকৃতির দ্বিতল মঞ্চটি যে কোনো দর্শনার্থীর নজর কাড়বে। রাতের বেলায় লাল-নীল-বেগুনি-হলুদ আলোয় এক অপরূপ দৃশ্য সৃষ্টি হয়।
বিশাল লেকের জলে শত প্রজাতির মাছ আর নানা প্রজাতির পাখি। আর জলের ওপর ভাসছে লাল-সাদা শাপলা ফুল। এ ছাড়া নানা ধরনের জলজ উদ্ভিদের সংগ্রহ। বিলুপ্ত প্রায় পানকৌড়ি দেখা যায় এই ডিসি লেকের জলে। ছোট ছোট রঙিন নৌকাও রাখা আছে পুরো লেক ঘুরে দেখার জন্য। নিরাপদ আশ্রয় আর পাখিদের কৃত্রিম বাসস্থানের পাশাপাশি খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়েছে এখানে।
লেকের জলের ওপর নির্মিত ‘লেকার্স ভিউ’। এখানে ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহার করে ইন্টারনেটে ব্রাউজ করতে পারছে দর্শনার্থীরা। একাধিক স্টল ও ফাস্ট ফুডের দোকান রয়েছে। পাড় বাঁধানো রঙিন সিঁড়িতে বসেও সময় কাটে বিনোদনপ্রেমীদের। সব মিলিয়ে জেলাবাসীর কাছে ডিসি লেক এখন প্রিয় একটি বিনোদনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। সরকারি একটি উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ডিসি লেকের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। তবে পূর্ণ রূপ পেতে আরো সময় লাগবে।
গত শুক্রবার বিকেলে প্রতিবেদকের কথা হয় জামালপুর জেলার বকশিগঞ্জের শফিউদ্দিনের সঙ্গে। টাঙ্গাইলে একটি ব্যবসার কারণে প্রায়ই আসতে হয় তাঁর। তিনি বলেন, ‘প্রায়ই টাঙ্গাইল আসতে হয় আমার। কিন্তু একটু নিরিবিলি সময় কাটানোর মতো কোনো জায়গা ছিল না। এবার এসে নতুন বাস টার্মিনালে বাস থেকে নেমেই অটোরিকশায় টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে আসতেই চোখে পড়ল ডিসি লেক। যেন চোখ ধাঁধানোর মতো অবস্থা হলো। এত সুন্দর একটি বিনোদনকেন্দ্র দেখে লোভ ছাড়তে পারলাম না।’
পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র রাইয়ান এসেছে পরিবারের সঙ্গে। তার বাবা সেলিম হাসান বলেন, ‘দীর্ঘদিন পরে হলেও আমাদের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়েছে। অবসরে বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর একটি জায়গা পেয়েছি।’
ডিসি লেকের একটি স্টলের মালিক আবদুল খালেক শিপন জানান, ডিসি লেকে প্রতিদিনই দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ছে। আর সরকারি বন্ধ বা শুক্রবারে দর্শনার্থীদের সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
টাঙ্গাইল জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হুদা নবীনের মতে, জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে অবশেষে ডিসি লেক হলো। এই উদ্যোগের ফলে বর্তমান জেলা প্রশাসক মাহবুব হোসেন জেলাবাসীর কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
ডিসি লেক প্রতিষ্ঠার বিষয়ে এনটিভি অনলাইনকে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ‘নির্ধারিত কাজের বাইরে প্রিয় সহকর্মী, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিকসহ সর্বস্তরের মানুষকে সম্পৃক্ত করে ডিসি লেককে একটি বিনোদনকেন্দ্রে পরিণত করতে পেরেছি। ভবিষ্যতে এখানে একটি ঝুলন্ত ব্রিজ ও একাধিক ফোয়ারা থাকবে।’ দর্শনার্থীদের বসার জন্য আরো পর্যাপ্ত ব্যবস্থা, শিশুদের সাঁতার শেখার জন্য সুইমিং পুলসহ নতুন নতুন আরো কিছু করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর।
আজ শুক্রবার সকালে পার্কের উদ্বোধন করেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। যদিও উদ্বোধনের আগেই গত দুই মাস ধরে দর্শনার্থীদের জন্য এটি খুলে দেওয়া হয়। এর পর থেকেই প্রতিদিন প্রচুর লোকসমাগম হচ্ছে ডিসি লেকে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিদের্শনা রয়েছে, দেশের পরিত্যক্ত সব জলাশয় ও খেলার মাঠ উদ্ধার করে জনগণের ব্যবহারযোগ্য করতে হবে। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী টাঙ্গাইলের পরিত্যক্ত লেকটি সংস্কার করে পার্কে রূপান্তর করা হয়েছে।
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য খন্দকার আবদুল বাতেন, সংসদ সদস্য মনোয়ারা বেগম, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) এম এম জিয়াউল আলম, ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার হেলালুদ্দিন আহমদ।