সেতুর আশ্বাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর চিঠি ছোট্ট শীর্ষেন্দুর হাতে
পটুয়াখালীর পায়রা নদীতে সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লেখা চিঠিটি ছোট্ট শীর্ষেন্দুর কাছে হস্তান্তর করেছে জেলা প্রশাসন। প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষরিত ওই চিঠি সোমবার স্কুল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে শিশুটির হাতে তুলে দিয়েছেন পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক এ কে এম শামিমুল হক ছিদ্দিকী। এ সময় তিনি শীর্ষেন্দুর পড়ালেখার দায়িত্ব জেলা প্রশাসনের, এমন ঘোষণাও দেন।
চলতি বছরের আগস্ট মাসে পটুয়াখালী সরকারি জুবিলি উচ্চ বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র শীর্ষেন্দু বিশ্বাস তার গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠির মির্জাগঞ্জে যাওয়ার পথে পায়রা নদীতে একটি সেতু নির্মাণের অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিল।
ওই চিঠি পেয়ে সেখানে সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিয়ে জবাব পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, যা আজ পটুয়াখালী জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে স্কুলশিক্ষকের হাতে পৌঁছেছে।
প্রধানমন্ত্রী লেখা চিঠি হস্তান্তরের সময় পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক এ কে এম শামিমুল হক ছিদ্দিকী বলেন, ‘আমাদের জেলার একটি শিশুর চিঠি পেয়ে উচ্ছ্বসিত ও আনন্দিত হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে মহানুভবতা দেখিয়েছেন, তাতে আমরা গর্বিত ও আনন্দিত। আর শিশু শীর্ষেন্দুর চিঠিতে মির্জাগঞ্জে খরস্রোতা পায়রা নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি পেয়ে সবাই আনন্দিত হয়েছে। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ।’
এ ব্যাপারে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. সিদ্দিকুর রহমান জানান, প্রধানমন্ত্রীর চিঠিটি গত ২০ সেপ্টেম্বর স্কুলের ঠিকানায় আসে। এরপর থেকে চিঠিটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছেই ছিল।
এদিকে শীর্ষেন্দুর বাবা বিশ্বজিৎ বিশ্বাস জানান, ‘প্রধানমন্ত্রীর জবাব পেয়ে শীর্ষেন্দু খুব খুশি হয়েছে। সে ভেবেছিল তার এই চিঠি হয়তো প্রধানমন্ত্রী পড়বেন না। কিন্তু ফিরতি চিঠিতে তার দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়ে ও খুবই উচ্ছ্বসিত।’
শীর্ষেন্দু চিঠিতে লিখেছিল, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সালাম ও শুভেচ্ছা নিবেন। আমি দেশের একজন সাধারণ নাগরিক। নাম শীর্ষেন্দু বিশ্বাস, পিতা বিশ্বজিৎ বিশ্বাস, মাতা শীলা রাণী সন্নামত। আমি পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির একজন নিয়মিত ছাত্র। আমার দাদু অবিনাস সন্নামত একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।
আমি আপনার পিতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদৎবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম। আমি আপনার পিতার শৈশবকাল রচনা লিখে তৃতীয় স্থান অধিকার করি।
আমার গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি। আমাদের মির্জাগঞ্জে নদী পাড়ি দিয়ে যেতে হয়। এটি পটুয়াখালী জেলার একটি উপজেলা। এ নদীতে প্রচণ্ড ঢেউ। মানুষ ভয় পায়। কখনো নৌকা ডুবে যায়, কখনো ট্রলার ডুবে যায়। এতে আমার থেকে ছোট ভাইবোন তাদের মা বাবাকে হারায়। আমি আমার মা বাবাকে প্রচণ্ড ভালোবাসি। তাদের হারাতে চাই না।
তাই আপনার কাছে একটাই অনুরোধ যে আপনি মির্জাগঞ্জ নদীতে ব্রিজের ব্যবস্থা করুন। তা যদি আপনি পারেন তা হলে আমাদের জন্য একটু কষ্ট করে এই ব্রিজ তৈরির ব্যবস্থা করুন।’
চিঠিতে ১৫ আগস্টের তারিখ দিয়ে প্রেরকের ঠিকানায় লেখা হয় পুরান বাজার, পটুয়াখালী।
জবাবে গত ৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শীর্ষেন্দুকে ফিরতি চিঠি পাঠান। চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী লিখেন, ‘স্নেহের শীর্ষেন্দু, তুমি শুধু দেশের একজন সাধারণ নাগরিকই নও। দেশের ভাবিষ্যৎ প্রজন্ম এবং দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেওয়ার অগ্রজ সৈনিক। আমি জানি পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার পায়রা নদীটি অত্যন্ত খরস্রোতা।
নিজের পিতামাতাসহ অন্যান্য পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এই নদীকেন্দ্রিক তোমার নিরাপত্তা সচেতনতা আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি বুঝতে পারি তোমার বীর মুক্তিযোদ্ধা দাদুর প্রভাব রয়েছে তোমার ওপর। মির্জাগঞ্জের পায়রা নদীতে একটি সেতু নির্মাণ করা হবে বলে তোমাকে আশ্বস্ত করছি।’
এরপর চিঠিটির শেষের দুই লাইনে শীর্ষেন্দুসহ পরিবারের সবার মঙ্গল কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
শীর্ষেন্দুর বাবা বিশ্বজিৎ বিশ্বাস পটুয়াখালীতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। তার মা শীলা রাণী সন্নামত সমবায় অধিদপ্তরের জেলা অফিসের কম্পিউটার অপারেটর।
প্রধানমন্ত্রী ছেলের চিঠির জবাব দেওয়ায় উচ্ছ্বসিত মা শীলা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার এখনো বিশ্বাস হয় না যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার ছেলের চিঠি পড়েছেন। আমি প্রধানমন্ত্রীকে হাজার হাজার প্রণাম জানাই। আমি খুবই গর্বিত।’
জানা গেছে, পটুয়াখালী সদর উপজেলার পায়রাকুঞ্জ এলাকায় পায়রা নদীর অপরপ্রান্তে মির্জাগঞ্জ উপজেলার মনোহরখালী। এ জায়গায় নদী প্রস্থে প্রায় দুই কিলোমিটার।