রূপকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে এনবিআর : চেয়ারম্যান
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘রূপকল্প-২০২১’ এবং ‘রূপকল্প-২০৪১’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রাজস্ব আহরণ প্রক্রিয়া গতিশীল করতে কাজ করছে এনবিআর।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর পরিদর্শনে এসে বন্দরের বেসরকারি অপারেটর পানামা হিলি পোর্টের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন এনবিআর চেয়ারম্যান। জেলা ও স্থানীয় প্রশাসন, কাস্টমস কর্মকর্তা, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস, আমদানি-রপ্তানিকারক ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), পুলিশ ও গণমাধ্যমকর্মীরা এতে অংশ নেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, জাতীয় জীবনে রাজস্ববান্ধব সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। তবে রাজস্ব বোর্ডের একার পক্ষে তা অর্জন করা সম্ভব নয়। সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। বর্তমান সরকার দেশের বন্দরগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন করছে। বন্দরগুলোর সমস্যা সমাধানে স্থানীয়ভাবে এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সমাধান করবে।
মতবিনিময় সভায় বাংলাহিলি কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কামাল হোসেন রাজ বলেন, হিলি স্থলবন্দরে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) না থাকায় আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা দিন দিন এ বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এতে করে রাজস্ব আহরণ কম হচ্ছে। পানামা পোর্টে একাধিক ওজন স্টেশন স্থাপনের দাবি জানান তিনি।
হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের আহ্বায়ক হারুন উর রশীদ বলেন, ভারতের হিলি অংশে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো না থাকায় এ বন্দর দিয়ে সব পণ্য আমদানি-রপ্তানি করা যায় না। এতে করে সরকার প্রচুর রাজস্ব হারাচ্ছে। মাঝেমধ্যে ভারতের কিছু রপ্তানিকারক দেশের আমদানিকারদের নামে পাঠানো বিবরণ অনুযায়ী ভালো মানের পণ্য দেন না। এতে আমদানিকারকরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন। এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য রি-এক্সপোর্ট সুবিধা বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।
হাকিমপুর পৌরসভার মেয়র জামিল হোসেন চলন্ত বলেন, পৌরসভার বিধি অনুযায়ী পৌরসভা ১ শতাংশ ল্যান্ডিং চার্জ পাওয়ার কথা থাকলেও পোর্ট কর্তৃপক্ষ সেটি দেয় না। ১ শতাংশ ল্যান্ডিং চার্জ পাওয়া গেলে পৌর এলাকার উন্নয়নে কাজ করা যেত।
হাকিমপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম জাহিদ বলেন, হিলি স্থলবন্দরে সড়ক প্রশস্ত না থাকায় যানজট প্রকট আকার ধারণ করেছে। হিলি থেকে জয়পুরহাট পর্যন্ত চার লেনের রাস্তা করার যে প্রতিশ্রুতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছিলেন, তা বাস্তবায়ন করা হলে বন্দরে যানজট থাকবে না। স্থলবন্দরের অভ্যন্তরে পর্যাপ্ত ওপেন শেড না থাকায় বর্ষা মৌসুমে মালপত্র ওঠানো-নামানোর সময় ফলমূলসহ অন্যান্য কাঁচা পণ্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কাস্টমস হাউসে সার্ভার সমস্যায় আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত হয়। এ ছাড়া স্থলবন্দরে স্থান সংকুলান না হওয়ায় পাথর আমদানিকারদের ব্যক্তিগতভাবে অন্যত্র পাথর রাখার সুবিধা দেওয়া প্রয়োজন।
মতবিনিময় সভায় ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের হিলি স্থলবন্দরের বিভিন্ন সমস্যা ও দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান জানান, হিলিতে ব্যবসা-বাণিজ্যের অমিত সম্ভাবনা রয়েছে। তা নিজের চোখে দেখতেই এ সফরে এসেছেন তিনি।
ব্যবসায়ী ও স্থানীয় প্রতিনিধিদের বিভিন্ন সমস্যা দ্রুত সমাধানের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (শুল্ক-নীতি) সদস্য মো. ফরিদ উদ্দিন।
বৈঠকে আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান তপন কুমার চক্রবর্তী, দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম, জয়পুরহাট-২০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মোস্তাফিজুর রহমান, হিলি শুল্ক স্টেশনের সহকারী কমিশনার মো. ফখরুল আমিন চৌধুরী, বাংলাহিলি কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান লিটন, যুগ্ম সম্পাদক শাহীনুর রেজা শাহীন প্রমুখ।