৭ মাত্রার ভূমিকম্পে ভেঙে পড়বে ঢাকার দুই লাখ ভবন
ঢাকায় সাত মাত্রার ভূমিকম্প হলে চার লাখ ভবনের মধ্যে দুই লাখই ভেঙে পড়বে বলে জানিয়েছেন স্থাপত্যবিদরা।
আজ বুধবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘মারাত্মক ভূমিকম্পের হুমকিতে বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক নাগরিক সমাবেশে বক্তারা এমন সতর্কবার্তা দেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানারস (বিআইপি) ও গ্রিন ভয়েসের আয়োজনে এ সমাবেশে বক্তারা বলেন, দ্রুত ও সঠিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করে সেসব ভবনের গায়ে ‘ঝুকিঁপূর্ণ’ লিখে নোটিশ ঝুলিয়ে দিতে হবে।
নিয়মবহির্ভূতভাবে যেভাবে ভবন গড়ে উঠেছে, তাতে নেপালের মতো ভূমিকম্প ঢাকায় আঘাত করলে উদ্ধার-চিকিৎসা বা সংবাদ প্রচারের জন্য কেউ থাকবে না বলেও বক্তারা তাঁদের বক্তব্যে উল্লেখ করেন।
এ সময় স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, সকল প্রকার প্রকল্প বন্ধ করে হলেও এ বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে নতুন মেয়রদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশের জন্য সতর্কবার্তা
মঙ্গলবার আবারো পর পর দুবার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান। প্রথম কম্পন অনুভূত হয় দুপুর ১টা ৯ মিনিটে। আর ১টা ৪০ মিনিটে অনুভূত হয় দ্বিতীয় দফার কম্পন। এ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নেপালে, যার মাত্রা ছিল যথাক্রমে ৭ দশমিক ৩ এবং ৬ দশমিক ৩। এবারের ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল গত ২৫ এপ্রিলের ভূমিকম্পের তুলনায় বাংলাদেশের আরো কাছে এগিয়ে এসেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বড় ধরনের ভূমিকম্পটি বাংলাদেশের জন্য সতর্কবার্তা। শক্তির মাত্রায় রিখটার স্কেলে গতকালের ভূমিকম্পটি ছিল ৭ দশমিক ৩ মাত্রার। বাংলাদেশে এর মাত্রা কী ছিল, তা জানার আগ্রহ সবার। তবে সেটা জানতে হবে রিখটার স্কেল দিয়ে নয়, ইনটেনসিটি স্কেল দিয়ে, যার মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠের কম্পনের মাত্রা মাপা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগে স্থাপিত দেশের একমাত্র আর্থ অবজারভেটরি ঢাকা ভূকম্পন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, ইনটেনসিটি স্কেলে ভূমিকম্পটি বাংলাদেশে ছিল ৩ থেকে ৪ মাত্রার।
বলা হচ্ছে, মাত্রা যখনই ৭-এ পৌঁছাবে, তখনই বড় ধরনের দুর্যোগ নেমে আসবে। ২৫ এপ্রিলের ভূমিকম্পটি ছিল বাংলাদেশ থেকে ৭৫০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে, আর এবারেরটি মাত্র ৬১০ কিলোমিটার।
সৈয়দ হুমায়ুন আখতার জানান, বাংলাদেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকের ভূগর্ভস্থ চ্যুতি বা ফাটলে জমা হওয়া শক্তি থেকে বারবার ভূমিকম্প হচ্ছে। প্রায় দুই হাজার ৫০০ কিলোমিটার পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত ওই ফাটলের অরুণাচল অংশে ভূমিকম্পের মাধ্যমে শক্তি বের হয়ে গেছে, নেপালের অংশ দিয়ে গত কয়েক দিনের ভূমিকম্পে ৫০ শতাংশ শক্তি বের হয়ে গেছে। বাকি আছে কেবল সিলেট বরাবর ডাউকি ফাটলের ভুটান সিকিম অংশ।
ভূতত্ত্ববিদদের আশঙ্কা, নেপাল অংশে পর পর দুই দফা বড় ভূমিকম্প হওয়ার পরও এখনো যে ৫০ শতাংশ শক্তি জমা রয়েছে, তা ফাটলের আরেকটি অংশ—ভুটান সিকিম অংশকে সচল করে দেয় কি না, যেখানে প্রায় হাজার বছর ধরে শক্তি জমা হচ্ছে। অথচ ভূমিকম্পের মাধ্যমে তা বের হচ্ছে না।