মিথ্যায় শুরু ছিটমহলের শিশুদের জীবন
মিথ্যা দিয়ে শুরু হয় ছিটমহলের শিশুদের জীবন। আর তা শেখান বাবা-মায়েরাই। অবশ্য এ ছাড়া কোনো উপায়ও থাকে না। কেননা ছিটমহলের পরিচয় দিয়ে শিক্ষা, চিকিৎসা বা অন্য কোনো সেবা পাওয়া যায় না। আর তাই শিশুদের ভবিষ্যতের স্বার্থে স্থলসীমান্ত চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়নের দিকে তাকিয়ে আছেন ছিটমহলের শিশুদের অভিভাবকরা।
urgentPhoto
ছিটমহলের শিশুদের বাস্তবতা হলো, বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই বাবা-মা দুটি শব্দ তাদের খুব ভালো করে শিখিয়ে দেন। তা হলো ‘ছিট’ আর ‘বাংলা’। আর তাই এই শিশুরা ছিটমহলের হলেও কোথায় থাকো-এই প্রশ্নের উত্তর দেয় ‘বাংলা’ বলে। নইলে যে মৌলিক অধিকারটুকুই মিলবে না।
লালমনিরহাটে হাতীবান্ধা উপজেলার গোতামারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুরা পাঠে ব্যস্ত। বিদ্যালয়ে দুটি ভবন ছিল। একটি পাকা দালান, অন্যটি টিনশেডের। টিনশেডের ভবনটি ভেঙে গেছে। এখন পাকা ভবনটির দুই কক্ষের একটিতে ক্লাস হয় আর অন্যটিতে শিক্ষকদের কার্যালয়। একটিতে ক্লাস করে তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। আর প্রথম আর দ্বিতীয় শ্রেণির খুদে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করে খোলা আকাশের নিচে। সে স্কুলেই পড়ে ছিটমহলের অনেক শিশু। ভারতীয় নাগরিক হওয়ায় বাংলাদেশের স্কুলগুলোয় ছিটমহলের শিশুদের ভর্তির সুযোগ নেই। আর তাই ছিটমহলের বাসিন্দা হলেও এসব শিশুর নথিপত্রে এরা বাংলাদেশেরই শিশু।
শিক্ষকরা অবশ্য সবই জানেন। তবে মানবিক কারণে তাঁরা মেনে নেন। কুড়িগ্রাম ফুলবাড়ী গঙ্গারহাট উচ্চ বিদ্যালয় এবং প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে একই অবস্থা দেখা গেল।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বললেন, ‘ছিটমহলের শিশুরা বাংলাদেশের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) থেকে জন্ম নিবন্ধন নিয়ে আসে। আমরা জন্ম নিবন্ধনের ভিত্তিতে ভর্তি করাই।’ তিনি আরো জানান, শিশুরা কোন এলাকার বাসিন্দা এটা জিজ্ঞাসা করলে বুঝতে পারি শিশুটি ছিট এলাকার।
গঙ্গারহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়া ছিটমহলের একাধিক শিক্ষার্থী জানিয়েছে, নাম-ঠিকানা বদলে লেখাপড়া শিখেও খুব একটা আশাবাদী নয় তারা। কারণ ছিট শুনলে চাকরি হয় না। আরো আছে নানা বঞ্চনা। এক শিক্ষার্থী বলল, ‘আমরা ভালো করলেও সেটা অবহেলা করে। কারণ আমরা যে ছিটের।’