দিনাজপুরে পায়ে লিখে জেডিসি দিচ্ছে রফিকুল
দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার মাদ্রাসাছাত্র রফিকুল ইসলামের দুটি হাতই জন্ম থেকে অচল। কিন্তু এর পরও থেমে থাকেনি তার পড়ালেখা। পা দিয়ে ঝকঝকে লিখে এবার সে খানসামা দ্বিমুখী ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।
রফিকুল দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার পাকেরহাট গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবা নাসির উদ্দীন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে একটি ছোট একটি পানের দোকান করেন। মা রুবিনা বেগম ছোট দোকান থেকে আসা আয় দিয়ে কোনোরকমে চালান সংসার।
রুবিনা বেগম বলেন, জন্ম থেকেই রফিকুলের দুই হাত অচল। শৈশবেই পড়ালেখায় আগ্রহ ছিল তার। তাই তাকে স্থানীয় পাকেরহাট কামিল মাদ্রাসায় প্রাথমিক শাখায় ভর্তি করা হয়। সেই মাদ্রাসা থেকে এবার সে জেডিসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।
রুবিনা বেগম জানান, একই কেন্দ্রে পা দিয়ে লিখে পঞ্চম শ্রেণি সমাপনী পরীক্ষা দিয়েছে রফিকুল। সেই পরীক্ষায় সে জিপিএ ৩ পেয়ে পাস করে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকার পরও অন্য পরীক্ষার্থীদের মতো বেঞ্চে বসে পরীক্ষা দিচ্ছে রফিকুল। তার আলাদাভাবে বসার কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি।
পরীক্ষা শেষে রফিকুলের কাছে জানতে চাওয়া হয়, কেমন হয়েছে। সে বলে, মোটামুটি ভালো। তবে কর্তৃপক্ষ আলাদা ব্যবস্থা করলে পরীক্ষা আরো ভালো হতো।
রফিকুল জানায়, দুটি হাতই সম্পূর্ণ অচল হওয়ায় তাকে লেখা, আঁকা, পানি পান, শরীরের চর্চা, চুল আঁচড়ানোর মতো কাজ পা দিয়ে করতে হয়। খাওয়া, গোসল করা আর পোশাক পরাতে সহযোগিতা করেন মা।
নিজ ছাত্রের বিষয়ে পাকেরহাট কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুহম্মদ রিয়াজুল ইসলাম শাহ জানান, শারীরিক প্রতিবন্ধী রফিকুল অদম্য ইচ্ছা থেকে লেখাপড়া করছে। সে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। সে পা দিয়ে লিখলেও জেডিসি পরীক্ষায় ভালো ফল করবে।
রফিকুলের বাবা বলেন, সংসারের অভাব-অনটনের কারণে রফিকুলের জন্মের পর ভালোভাবে চিকিৎসা করতে পারেননি। তিনি রফিকুলের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে বিত্তবানদের সহযোগিতা চেয়েছেন।
লেখাপড়া করে কী হতে চায়—জানতে চাইলে রফিকুল বলে, সে শিক্ষক বা ডাক্তার হতে চায়, যাতে তার মতো শারীরিক প্রতিবন্ধীদের পাশে দাঁড়াতে পারে।