নির্যাতনে যুবক হত্যার অভিযোগ যুবলীগকর্মীদের বিরুদ্ধে
দিনাজপুরে যুবলীগকর্মীদের নির্যাতনে মঞ্জুরুল ইসলাম (১৮) নামের এক যুবক মারা গেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় গতকাল বুধবার রাতে ১১ যুবলীগকর্মীকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। এঁদের মধ্যে রয়েছেন মির্জা মামুন, সালেকিন রানা, মিথুন, রিকো, তরিকুল, সিরাজুস। বাকি পাঁচজনের নাম জানা যায়নি। সবাই জেলা যুবলীগের কর্মী।
এঁদের মধ্যে গতকাল রাতেই মির্জা মামুন ও মিথুনকে গ্রেপ্তার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ১৩-এর সদস্যরা।
পরিবার ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিহত মঞ্জুরুল ইসলামের বাড়ি সদর উপজেলার ৫ নম্বর শশরা ইউনিয়নের মহতুল্লাপুর মণ্ডলপাড়া গ্রামে। মঞ্জুরুল ইসলাম ট্রাকের সহকারী ছিলেন। কয়েকদিন আগে তিনি সদর উপজেলার খোদমাধবপুর গ্রামের মির্জা মামুনের ট্রাকের সহকারী হিসেবে চট্টগ্রামে যান। সেখান থেকে ফেরার সময় রাস্তায় ট্রাকের চালক নেমে যান এবং ট্রাকটি নিয়ে মঞ্জুরুল ফিরে আসেন দিনাজপুরে।
পরিবারের সদস্যরা জানান, গত ২৫ অক্টোবর মঞ্জুরুলের খোঁজ পাওয়া যায় না। ২৬ অক্টোবর মোবাইল ফোনে স্বজনদের জানানো হয় তিনি দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। সেখানে মঞ্জুরুল তার স্বজনদের জানান ট্রাকের মালিক মির্জা মামুনের নেতৃত্বে যুবলীগকর্মী সালেকিন রানা, মিথুন, রিকো, তরিকুল, সিরাজুসসহ আরো পাঁচ-ছয়জন ২৫ অক্টোবর রাতে তাকে তুলে নিয়ে যান। এরপর উপশহর ১ নম্বর ব্লকের তৈয়বা মজুমদার রেড ক্রিসেন্ট ব্লাড ব্যাংকে আটকে রেখে সারারাত নির্যাতন চালানো হয়।
মঞ্জুরুল ইসলামের বাবা আবদুল কাদের ও বোন নাসিমা বেগমের সঙ্গে বথা বলে জানা যায়, প্লায়ার্স দিয়ে মঞ্জুরুল ইসলামের হাতের নখ তুলে ফেলা হয়। দুই হাতে ব্লেড দিয়ে চিরে লবণ ও মরিচের গুঁড়া দেওয়া হয়। এরপর তাঁকে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে সেখান থেকে উদ্ধার করে দিনাজপুর র্যাব ১৩-এর সদস্যরা দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে ১ নভেম্বর সকাল ১১টার দিকে মারা যান মঞ্জুরুল।
দিনাজপুর র্যাব ১৩-এর কর্মকর্তা মেজর মেহেদী জানান, মঞ্জুরুল ইসলাম হত্যা মামলার আসামি মির্জা মামুন ও মিথুনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। খুব শিগগিরই আসামিরা আটক হবে বলে তিনি জানান।
জেলা যুবলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মামলার আসামিরা যুবলীগকর্মী। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধে তাদের বহিষ্কার করা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৈয়বা মজুমদার রেড ক্রিসেন্ট ব্লাড ব্যাংকের এক কর্মচারী জানান, প্রতিষ্ঠানের দ্বিতীয় তলার রেস্ট হাউসটি ব্যবহার করেন সালেকিন রানা। সেখানে অনেক লোকজনকে আটকে রেখে চাঁদা আদায়সহ নির্যাতন চালানো হতো।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেদওয়ানুর রহিম জানান, সুরতহাল প্রতিবেদনে দেখা গেছে নিহত মঞ্জুরুলের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। তাঁর বড় ভাই মতিউর রহমান ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
পুলিশ জানায়, ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে মঞ্জুরুলের পরিবার। দুই কোটি টাকার ইয়াবার চালানকে কেন্দ্র করে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন মঞ্জুরুলের বাবা আবদুল কাদের।