তিন বছর ৮ মাসে দেশ হবে দারিদ্র্যমুক্ত, আশা প্রধানমন্ত্রীর
বর্তমান সরকারের বাকি মেয়াদ অর্থাৎ তিন বছর আট মাস সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশ দারিদ্র্যমুক্ত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য আগামীতে আমাদের হাতে যে সময় আছে, ওই তিন বছর আট মাসের মধ্যে এই বাংলাদেশকে আমরা আরো প্রায় ১০ ভাগ দারিদ্র্যের হার কমিয়ে বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ হিসেবে ইনশা’আল্লাহ আমরা গড়ে তুলব।’
urgentPhoto
আজ শনিবার বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক সমাবেশে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা জনগণের জন্য কাজ করি, তাদের জন্যই আমাদের সকল পদক্ষেপ। ছিটমহলবাসী এখন নাগরিকত্ব পেয়ে সুন্দরভাবে বাস করবে। আমরা চাই বাংলাদেশের মানুষ নাগরিক সুবিধা পাক।’
নিজের বক্তব্যে বিএনপি ও জামায়াত জোটের বিভিন্ন সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত মানেই খুন খারাবি আর ধ্বংসের রাজনীতি। এই রাজনীতি বাংলাদেশে চলবে না। যারা এই দেশকে ধ্বংসের চেষ্টা করেছে, তাদের কোনো ক্ষমা নাই। তাদের বিচার বাংলাদেশের মাটিতে হবেই হবে। এরা মানুষের বন্ধু না, শত্রু। এরা মানবতার বিরুদ্ধে কাজ করে। আমি আপনাদের কাছে বিনীতভাবে অনুরোধ করছি। আপনারা আওয়ামী লীগের হাতকে শক্তিশালী করুন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসা মানেই উন্নতি।’
এ সময় ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এমপি নির্বাচিত শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসীর দোয়া চান শেখ হাসিনা। নিজের বক্তব্যে বর্তমান সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ সবার দোরগোড়ায় কমিউনিটি ক্লিনিক করে দিয়েছি। আজ মা-বোনেরা পায়ে হেঁটে গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারেন। ৩০ প্রকারের ওষুধ বিনামূল্যে পাচ্ছেন। বিনা পয়সায় আপনারা চিকিৎসা পান। উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ওয়েব ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কেন্দ্রগুলোকে আড়াইশো বেড করা হচ্ছে।’
হরতাল-অবরোধের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনাদের ছেলেমেয়েদের আপনারা পড়ান। টাকা খরচ করে বই আপনাদের কিনতে হয় না। বই দিচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার। প্রতিবছর ১ জানুয়ারি আপনারা বই পাচ্ছেন। বই নিয়ে ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাবে। পড়াশোনা করবে। এটা বোধহয় তাদের পছন্দ হলো না। নিজেদের ছেলেদের পড়ানোর জন্য সরকারি টাকা নিয়েও পড়ায় নাই। দিল হরতাল-অবরোধ। এসএসসি পরীক্ষা শুরুর দিনে দিল হরতাল। কারণ সাধারণ মানুষের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখুক এটা তারা চায় না।’
আওয়ামী লীগের লক্ষ্য দেশের উন্নয়ন। তাই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশের সব এলাকায় উন্নয়ন করা হচ্ছে বলেও জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেত্রী দীর্ঘদিন ক্ষমতায় ছিল। দুর্নীতি, মানুষ খুন করা ছাড়া আর কিছু শেখেনি। ৮১ সাল থেকে সরকারের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে ছেলেদের লেখাপড়ার জন্য। কী লেখাপড়া করিয়েছে? তার ছেলেকে আজ মানুষ খুনের দায়ে লন্ডনে লুকিয়ে থাকতে হয়। এই শিক্ষাই তারা নিয়েছে। জনগণের পেটে লাথি মারার শিক্ষা।’
হরতাল-অবরোধ করে খালেদা জিয়া গরিবের পেটে লাথি মেরেছেন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘হরতাল-অবরোধে কার ক্ষতি হয়েছে? খালেদা জিয়ার তো কোনো ক্ষতি হয় নাই। তিনি অফিসে বসে মজার মজার খাবার খেয়েছেন। খালেদা জিয়ার কাজ হলো গরিবের পেটে লাথি মারা।’
এ ছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জে কোনো মানুষ গৃহহারা থাকবে না বলে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খাসজমিতে ভূমিহীনদের থাকার ব্যবস্থা এবং জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করা হবে।’
এর আগে দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মহানন্দা নদীর ওপর ‘শেখ হাসিনা সেতু’ (দ্বিতীয় মহানন্দা সেতু) উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পরই সেতুটি জনসাধারণের চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।
জেলা শহর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে সাহেবের ঘাটে ৫৪৬ দশমিক ৬০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং আট দশমিক ১০ মিটার প্রস্থের কনক্রিট গার্ডার সেতুটি উদ্বোধন করা হয়। সেতুটি চালু হওয়ায় সদর উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের পাঁচ লাখের বেশি লোকের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি অবসান হবে বলে আশা করা হচ্ছে।