‘আন্দোলন করানো শিক্ষকদের হিসাব দিতে হবে’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। নবনির্মিত বিজ্ঞান ভবনের তৃতীয় তলা হস্তান্তরের দাবিতে এ অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা।
আজ মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিক্ষোভ মিছিলসহ প্রশাসনিক ভবনের সামনে আসেন এ দুই বিভাগের শিক্ষার্থীরা। পরে দুপুর ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত ঘণ্টাব্যাপী এ পূর্বঘোষিত কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
এর আগে গতকাল সোমবার দুপুরে উপাচার্যের সাথে দেখা করে ভবন নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছিলেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এই সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সমস্যা সমাধান না করতে পারায় পূর্ব-ঘোষিত কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা।
দুপুর পৌনে ১টার দিকে দুই বিভাগের ১৫-২০ জন শিক্ষার্থী উপাচার্য ফারজানা ইসলামের সাথে দেখা করতে তাঁর কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। এ সময় তাঁরা তাঁদের দাবির অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চান।
জবাবে উপাচার্য শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছি, চেষ্টা করে যাচ্ছি। এবার তোমরা তোমাদের শিক্ষকদের ক্লাস-পরীক্ষার জন্য চাপ দাও। তিন বিভাগের শিক্ষকদের নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেই এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। আলোচনা না করতে পারলে প্রয়োজনে তাঁরা আদালতে যাক। তোমাদের দিয়ে যাঁরা আন্দোলন করাচ্ছেন, তাঁদের অবশ্যই জনগণের কাছে হিসাব দিতে হবে।’
এ ছাড়া শিক্ষকদের নম্বর আটকে দেওয়ার রাজনীতির সমালোচনা করেন উপাচার্য। নিজের দায়িত্ব ভুলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেওয়ার প্রবণতা এবং বিভিন্ন বিভাগে চালু করা সান্ধ্যকালীন কোর্সের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আর নয়। এবার লাগাম টেনে ধরা হবে, এসব কোর্সের ব্যাপারে নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদকে কেন্দ্র করে শিক্ষক রাজনীতির ব্যাপারে ফারজানা ইসলাম বলেন, ‘এ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো উপাচার্যের দেড় বছর পার না হতেই আবার রাজনীতি শুরু হয়ে যায়। তবে এবার আমি দায়িত্ব ছেড়ে পালাব না। প্রয়োজনে এখানেই মারা যাব।’
একপর্যায়ে বেলা আড়াইটার দিকে কোনো সমাধান বা আশ্বাস ছাড়াই উপাচার্যের কার্যালয় থেকে ফিরে যান শিক্ষার্থীরা। এর পর পরই উপাচার্য তাঁর কার্যালয় ত্যাগ করেন। এ সময় উপ-উপাচার্য আবুল হোসেন এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবুল খায়ের উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ এবং ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, আগামীকাল বুধবার সকাল থেকে অফিস চলা পর্যন্ত পূর্বঘোষিত প্রশাসনিক ভবন অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হবে।
নবনির্মিত বিজ্ঞান ভবনের তৃতীয় তলায় স্থান বরাদ্দের দাবিতে প্রায় দেড় মাস ধরে টানা আন্দোলন করে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি বিভাগ। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার ভোর ৫টার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট কর্তৃক বরাদ্দ করা অংশে চেয়ার-টেবিল নিয়ে উঠে পড়ে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ। তারপর থেকে ভবনের প্রথম থেকে তৃতীয় তলা পর্যন্ত বরাদ্দের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ও ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেছে এ দুটি বিভাগ।